Print Date & Time : 28 June 2025 Saturday 10:27 pm

স্বস্তি ফিরলেও আছে শঙ্কা

ক্রীড়া ডেস্ক : দিনভর নানা নাটকের পর গত পরশু রাতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও ধর্মঘটের ডাক দেওয়া ক্রিকেটাররা আলোচনায় বসেন। এরপরই মূলত সবকিছুর সমাধান হয়। ক্রিকেটাররা ঘোষণা দেন মাঠে ফেরার। তাতে দেশের ক্রিকেটেও ফেরে স্বস্তি। কিন্তু শঙ্কা পুরোপুরি কাটেনি।

বোর্ডের সঙ্গে সংকট সমাধানের সভাতেও শুরুতে ক্রিকেটারদের বেশ এক হাত নিয়েছেন নাজমুল হাসান। পরে অবশ্য স্বাভাবিক আলোচনা করেছেন তিনি। ক্রিকেটারদের প্রতি বোর্ডের দৃষ্টিভঙ্গি বদল তাই আদৌ কতটা হবে সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

বিসিবি কিন্তু এর আগেও ক্রিকেটারদের অনেক দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু পরে সেসবের কিছুই বাস্তবায়ন করেনি। তাই এবারও থেকে যাচ্ছে শঙ্কা।

ক্রিকেটাররা এবার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন মূলত ঘরোয়া লিগের পারিশ্রমিক বাড়ানোর জন্য। বিসিবি প্রধানও তাদের আশ্বাস দিয়েছেন পারিশ্রমিক বাড়ানোর। কিন্তু তিনি তো বলেননি কতটা বাড়বে তাদের পারিশ্রমিক?

গত পরশু বিসিবির সঙ্গে আলোচনার পর সাকিব যখন সংবাদ সম্মেলনে আসেন, তখন তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল এক লাখ টাকা ম্যাচ ফি বোর্ড দেবে কি না। কিন্তু তিনি এর সঠিক কোনো উত্তর দিতে পারেননি। এ জায়গায় তাই প্রবল সংশয় আছে দাবি পুরোপুরি বাস্তবায়ন নিয়ে। ঘরোয়া ক্রিকেটারদের অনেকের কণ্ঠে তাই হতাশার সুরও থাকল। বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘরোয়া এক ক্রিকেটার বলেন,   ‘আমাদের প্রধান দাবি ছিল বেতন বাড়ানো। তবে সেটি বাস্তবায়ন হবে বলে মনে হয় না। কারণ, সে ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়নি, যা হয়েছে সব জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের জন্য।’

এদিকে প্রথম শ্রেণির আরেক ক্রিকেটার বলেন, ‘কী দাবি মানল আর কি মানল নাÑকিছুই বুঝলাম না। বেশিরভাগ আলোচনাই হয়েছে জাতীয় দলকেন্দ্রিক। আমাদের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। কী হবে এখন কে জানে? মনে হচ্ছে, বেতন তো বাড়বেই না, হয়তো আমাদের অনেকেরই ক্যারিয়ার ধ্বংস হবে!’

ঘরোয়া ক্রিকেটারদের কারও কারও মধ্যে এরই মধ্যে জেগেছে শঙ্কা: পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে ওঠার পর তাদের ক্রিকেট জীবন না আবার অস্বাভাবিক করে তোলা হয়! ধর্মঘটে যুক্ত থাকা এক ক্রিকেটার অবশ্য বলছেন, এটিকে ভয় নয়, চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে, ‘পারফরম্যান্স খারাপ করলে বাদ পাড়াটা নতুন কিছু নয়। হ্যাঁ, এখন হয়তো এ বিষয়ে বোর্ড আরও কঠোর হবে। এতে ভয় না পেয়ে বরং চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। ভালো খেললে আমাকে কেউ কিছু বলতে পারবে না, সবাইকে এটাই ভাবা উচিত।’

তাই এখন থেকে শুধু পারফরম্যান্স নয়, ক্রিকেটারদের অন্য বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে। তারপরও যদি ভুল হয়, বিসিবি যেন সেই ভুলের সুযোগে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত চাপিয়ে না দিতে পারে। এজন্যই সাকিবরা ক্রিকেটারদের সংগঠন কোয়াবে নতুন নেতৃত্ব চান। যাতে যে কোনো খেলোয়াড়ের সমস্যা-সংকট, বিপদ-আপদে বড় ঢাল হয়ে দাঁড়াতে পারে সংস্থাটি। এজন্য সেখানে তারা নেতৃত্বে চাইছেই বর্তমান খেলোয়াড়দের।

ধর্মঘট শেষ হলেও ক্রিকেটারদের দাবি কতটা পূরণ হবে, সে নিয়ে থেকে যাচ্ছে শঙ্কা। শুধু তা-ই নয়, যে কোনো ক্রিকেটারেরই ক্যারিয়ার ধ্বংসের মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ দুটি ভয়ের ছাপ কিন্তু গত পরশুই ফুটে ওঠে অনেকের কণ্ঠে। এই ছাপ যেদিন মুছে যাবে, সেদিনই হয়তো ক্রিকেটারদের ১৩ দফার এ আন্দোলন পুরোপুরি সফল হবে।