Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 1:16 am

স্বাচ্ছন্দ্যে সারুন কেনাকাটা

রাহাতুল ইসলাম: ঈদ উদ্যাপন শুরু হয়েছে বহুকাল আগে মদিনাবাসীদের মাধ্যমে, যা বছরে দুবার পালন করা হয়। দুই ঈদ মুসলমানদের শ্রেষ্ঠ দুটো উৎসব। উৎসবকে কেন্দ্র করে সবার নতুন পোশাক কেনার প্রতি বিশেষ আকর্ষণ কাজ করে। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে নতুন পোশাক উঠেছে ঢাকার শপিং সেন্টারগুলোয়। মানুষের পদচারণে মুখর শপিংমলগুলো।
রোজার শুরু থেকেই কেনাকাটা করছেন অনেকে। তবে যারা এখনও কেনাকাটা করেননি, শেষ সময়ের অপেক্ষায় রয়েছেন তাদের কিছুটা হ্যাপা পোহাতে হতে পারে। তাই তাদের কেনাকাটায় যেন গোলমাল পাকিয়ে না যায় সে জন্য কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। যেমন কেনাকাটায় যাওয়ার আগেই লিস্ট করুন। লিস্ট করার পাশাপাশি ঠিক করে নিন কোথা থেকে কি কিনবেন। জায়গাগুলো আলাদা হলে ভিন্ন ভিন্ন দিনে যাওয়ার পরিকল্পনা করুন। সম্ভব হলে কোন খাতে কত খরচ করবেন লিস্টের পাশে সেটিও লিখে ফেলা ভালো। তাতে কেনাকাটায় সুবিধা হবে। পছন্দ মতো পণ্য কিনতে চাইলে শপিংয়ের জন্য একটি উপযুক্ত সময় বেছে নিন। আর অবশ্যই হাতে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে বের হবেন।
শপিংয়ে একসঙ্গে অনেকে মিলে না যাওয়াই ভালো। কারণ এক সঙ্গে অনেক মানুষ থাকলে স্বভাবতই দেরি হয়। কেনাকাটার সময় বাঁচাতে প্রাইভেটকার কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চড়ে দোকানে যেতে পারেন। কারণ এ সময় রাস্তাঘাটে ভিড় লেগেই থাকে। আবহাওয়া ভীষণ গরম। তাছাড়া ঈদের কেনাকাটায় ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি হয়। তাই এ সময় ছোট শিশুদের সঙ্গে না রাখাই ভালো।
কেনাকাটায় সাবধান থাকুন। কারণ ঈদের আগে মার্কেটের ভিড়ে পকেটমারের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। তাই ভিড়ের মধ্যে কেনাকাটার সময় ব্যাগ ও পকেট সামলে রাখুন। এছাড়া অনলাইনে পণ্য অর্ডারের ক্ষেত্রে সচেতন থাকবেন। এখন অনেক নামসর্বস্ব অনলাইন শপ গ্রাহককে নানাভাবে প্রতারিত করছে।
ঈদের দিন যত কাছে আসছে, কেনাকাটা ততই বাড়ছে। উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে ঢাকার সব বিপণি-বিতানগুলোয়। বিশেষ করে ইফতারির পর ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। নিউ মার্কেটের এক ব্যবসায়ী রেজাউল করিমের কাছে ব্যবসা কেমন চলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যবসা ভালো হচ্ছে, বিক্রিও বেড়েছে। তবে দেশের একটি বড় অংশ প্রতি বছর ভারত থেকে কেনাকাটা করে আসে। আর এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পোশাক খাতের সুনাম থাকলেও অনেকের পছন্দ ভারত ও পাকিস্তানের ড্রেসের প্রতি। অধিকাংশ মানুষ দোকানে এসেই বলে পাকিস্তানি বা ইন্ডিয়ান ড্রেস দেখান। তখন বিষয়টি আমাকে কষ্ট দেয়। এ বিষয়ে আরও কিছু মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হয়। তারাও মোটামুটি এ বিষয়ে একমত।
গুলশানের বাসিনদা সাবরিন উনাইফা। তিনি ভারত থেকে ঈদের কেনাকাটা করে এসেছেন। তার কাছে জানতে চাইলাম কেন ওখান থেকে কেনাকাটা করলেন, দেশের বাজারের সমস্যা কি? উত্তরে তিনি বলেন, কেন করব না? ওখানে পণ্যের দাম তুলনামূলক কম। দেশে যে টাকায় মার্কেটিং করব দেখা যায় ওই টাকায় বা আর দুই-চার হাজার টাকা যোগ করে ভারতে ঘোরাঘুরি ও কেনাকাটা করে আসা যায়। পাশাপাশি ওখানকার ব্যবসায়ীদের ব্যবহার অনেক ভালো। ১০০টি ড্রেস দেখানোর পরেও যদি কেউ কোনো ড্রেস না কেনেন, তাতে কোনো খারাপ ব্যবহার অথবা এমন কোনো আচরণ করে না যতে কেউ অসন্তুষ্ট হয়। অথচ দেশে ৫ থেকে ১০টি ড্রেস দেখালেই বিরক্ত হয়ে যান বিক্রেতারা। মাঝে মধ্যে আজেবাজে কথাও বলে। একই মত ঢাকার বাড্ডা ও বনশ্রীর দুই গৃহিণী ফারজানা রিমি ও সালেহা জামানের।
বাংলাদেশের ফ্যাশন হাউজগুলোর সংগঠন ফ্যাশন উদ্যোগের এক জরিপের তথ্য অনুসারে, ঈদকে কেন্দ্র করে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়। সেখানে দেশের বুটিক হাউজগুলোর ব্যবসা মাত্র চার হাজার কোটি টাকার মতো। এতে বোঝা যাচ্ছে, বাকিটা বিদেশের কাপড় আর পোশাকের দখলে। সব মিলিয়ে দেশের বাজারে দাম, মান ও বিক্রয় ব্যবস্থাপনার দিকে নতুন করে নজর না দিলে দেশীয় বাজার নিয়ে ব্যবসায়ীদের দুর্ভাবনা কমার বদলে দিনদিন বাড়বে বলেই প্রতীয়মান হয়।