শেয়ার বিজ ডেস্ক: গুণীজনদের হাতে ‘স্বাধীনতা পদক, ২০২১’ তুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। দেশের মানুষ যেন আরও সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, সে লক্ষ্য নিয়ে তার সরকার পরিকল্পনা নিয়েছে। দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে কাজ করে যাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গণভবনে স্বাধীনতা পদকদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশটা যাতে এগিয়ে যায়, দেশের মানুষ যাতে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারে, সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে সেটাই সব সময় আমরা চাই। আর সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা স্বাধীন জাতি, আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। কাজেই আমরা সব সময় বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে চলব; কারও কাছে হাত পেতে নয়, করুণা ভিক্ষা করে নয়। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জনকে ব্যর্থ করে দেয়ার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি না একটা স্বাধীন জাতি বা স্বাধীন দেশের নাগরিক যারা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে, তারা কীভাবে আবার পরাজিত শক্তির পদলেহন করতে পারে। এটা আমি ভাবতেও পারি না। কিন্তু সেই অবস্থাতেই বাংলাদেশকে কিন্তু নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। জাতির পিতার নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার সব ধরনের অপচেষ্টা করা হয়েছিল। জাতির পিতাকে হত্যার পর এমন একটা সময় ছিল যখন কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেছে, এই কথা বলার সাহস পেত না। তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) দল (আওয়ামী লীগ) যখন সরকারে এসেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের হারানো সম্মান ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে।
স্বাধীনতা পদক পাওয়া বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অনুসরণ করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তরুণ প্রজন্মকে জাতির কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আর আমি এটাই চাই যে, আপনাদের (পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ) পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে। নিজ নিজ কর্মস্থানে তারা নিশ্চয় তাদের মেধা-মননে যোগ্য একটা অবস্থান করে নেবে এবং দেশ ও জাতির জন্য তারা কিছু অবদান রেখে যাবে। সেটাই আমরা চাই। অন্তত আপনাদের কাছ থেকে তারা উৎসাহ পাবে। দেশের জন্য, জাতির জন্য, জাতির কল্যাণের জন্য তারা কাজ করবে।
আজ হাতে গোনা কয়েকজনকে পুরস্কার দেয়া হলেও সমাজের আরও অনেককে তাদের অবদানের জন্য পুরস্কৃত করা উচিত বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সমাজের বহু ক্ষেত্রে অনেকে অবদান রেখে যাচ্ছেন। তাদের পুরস্কৃত করতে পারা মানে আমরা আমাদের জাতিকে পুরস্কৃত করি, নিজেদের পুরস্কৃত করি।
৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার, ২০২১’ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর এ পুরস্কার দিয়ে আসছে।
স্বাধীনতা পুরস্কারের ক্ষেত্রে পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে পাঁচ লাখ টাকা, ১৮ ক্যারেট মানের ৫০ গ্রাম স্বর্ণপদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেয়া হয়।
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে এবার চারজন স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন। তারা হলেন মরহুম একেএম ফজলুর রহমান, শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার, মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশিদ উদ্দিন আহমেদ ও মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্যাটেগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন ড. মৃš§য় গুহ নিয়োগী। সাহিত্যে কবি মহাদেব সাহা, সংস্কৃতিতে নাট্যজন আতাউর রহমান ও সুরকার-গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন।
‘সমাজসেবা/জনসেবা’ক্ষেত্রে অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন এবং গবেষণা ও প্রশিক্ষণে স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল।
মরহুম বজলুর রহমানের পক্ষে তার স্ত্রী শাহানারা বেগম, আহসানউল্লাহ মাস্টারের পক্ষে তার ছেলে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশিদ আহমেদের পক্ষে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর পক্ষে তার ছেলে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ পুরস্কার নিয়েছেন।
জীবিতদের মধ্যে কবি মহাদেব সাহার অনুপস্থিতিতে তার ছেলে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নেন। ডক্টর মৃš§য় গুহ নিয়োগী, আতাউর রহমান গাজী, মাজহারুল আনোয়ার ও ড. আমজাদ হোসেন উপস্থিত থেকে পুরস্কার নেন। কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক পুরস্কার নেন।