স্বাধীনতার মাসে টেস্ট জয়ের গৌরব

টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের শততম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দারুণ জয় পাওয়ায় বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে এখন স্বভাবতই বইছে আনন্দের বন্যা। এজন্য জাতীয় দলের কৃতী ক্রিকেটারদের অভিনন্দন জানাই। আশা করি, সফরের পরবর্তী ম্যাচগুলোয়ও তারা নৈপুণ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে এবং দেশবাসীকে এনে দেবে উদ্যাপনের নতুন সুযোগ। বস্তুত শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম এ জয় এমন সময় এলো, যখন স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতি; দিনটি ঘিরে আমাদের গর্বের প্রতীক লাল-সবুজ পতাকা মুক্ত হাওয়ায় ওড়ানোর প্রস্তুতি চলছে নানাভাবে। ঠিক সে সময়ে বিদেশের মাঠে টেস্ট বিজয় জাতীয় পতাকার মর্যাদাই শুধু বৃদ্ধি করেনি, ক্রিকেট বিশ্বকেও এ বার্তা দিয়েছে যে, নিছক সৌভাগ্যবশত নয় লড়াই করে জিততে শিখেছে বাংলাদেশ।

যেসব বিষয় নিয়ে জাতি হিসেবে আমরা গর্ব করতে পারি, মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি বিশ্বদরবারে, সেগুলোর তালিকায় ক্রিকেটের স্থান এখন উপরের দিকে। শুধু টেস্ট খেলুড়ে দেশ হওয়ার কারণেই বহির্বিশ্বের অনেকে এখন জানে বাংলাদেশের নাম; চেনে এ দেশের পতাকা। টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি ভার্সন যেটাই হোক, কোনো পরাশক্তি দলের বিরুদ্ধে জয়লাভ করলে সারা বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীর মধ্যে উজ্জ্বল হয় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি। বস্তুত এর প্রভাব তখন শুধু ক্রিকেটে সীমাবদ্ধ থাকে না; ছড়িয়ে পড়ে নানা ক্ষেত্রে। একেকটি বড় জয়ের পর বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে যখন সংবাদটি পৌঁছায়, তখন এ দেশ সম্পর্কে ব্যাপকভাবে জানতে কারও কারও মনে উৎসাহ জাগে স্বভাবতই। ভিনদেশি ক্রিকেটপ্রেমীদের এ আগ্রহকে আমরা পর্যটন বিকাশে কীভাবে কাজে লাগাতে পারি, তা ভেবে দেখা যেতে পারে। ক্রিকেটে একের পর এক বড় অর্জন আমাদের ‘সফট পাওয়ার’ সুদৃঢ় করছে নিঃসন্দেহে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগে এটাকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় স্বার্থ কীভাবে হাসিল করা যায়, সে ব্যাপারেও দেওয়া যেতে পারে বিশেষ মনোযোগ।

মনে রাখা দরকার, সবচেয়ে কম সময়ে বাংলাদেশ শততম টেস্ট খেললেও জয়ের সংখ্যা খুব বেশি নয়। নিকট অতীতে একদিনের ক্রিকেট ও টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দল বড় উন্নতি করলেও পাঁচ দিনের ক্রিকেটে দলটির পারফরম্যান্স নিয়ে রয়েছে নানা মত। বলতে দ্বিধা নেই, দীর্ঘ মেয়াদের ক্রিকেট খেলার জন্য যেমন ধৈর্য দরকার, তা দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বেশ কিছু ম্যাচে মেনে নিতে হয়েছে পরাজয়। নইলে টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের সাফল্যের পরিসংখ্যান আরও ইতিবাচক হতে পারতো। এজন্য আমরা চাইবো, সর্বশেষ এ জয় ঘিরে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা নতুনভাবে উজ্জীবিত হোক। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে সক্ষমতার পাশাপাশি সংযমের যে পরিচয় কয়েকজন খেলোয়াড় এ ম্যাচে দিয়েছেন, এটা ছড়িয়ে পড়–ক দলের সবার মধ্যে। অব্যাহতভাবে এর চর্চা নিয়ে আসুক আরও বড় সাফল্য।

বলা ভুল হবে না, বাংলাদেশ এখন ক্রিকেটমগ্ন জাতি। রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহ সবখানে। এর একটা ভালো দিক হলো, মানুষের এমন আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে ক্রিকেটে আরও উন্নতি করা সম্ভব। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক দিকও দৃষ্টিগোচর হয়; বিশেষত বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কোনো ম্যাচে পরাজয় বরণ করলে। ভুলে গেলে চলবে না, জয়-পরাজয় খেলারই অংশ। এজন্য আত্মনিয়ন্ত্রণের শিক্ষা নেওয়া উচিত দর্শক-সমালোচকদের। আবেগের বশে কখনও এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে সুস্পষ্ট হয় ধৈর্যচ্যুতি বা বিবেচনাহীনতা। আমরা মনে-প্রাণে চাই, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বড় বড় সাফল্য অর্জন করুক; অব্যাহত থাকুক আমাদের বিজয়ের গৌরব। সঙ্গে চাই দর্শক-সমালোচকদেরও উন্নতি। তারাও খেলার অংশ। টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে সুষম উন্নতির জন্য এটা দরকার।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০