স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে চালু হচ্ছে না পদ্মা সেতু!

ইসমাইল আলী: পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের নভেম্বরে। পরে তা কয়েক দফা পেছানো হয়। বর্তমানে তা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী তথা ২০২১ সালের ডিসেম্বরে উদ্বোধনের কথা বলা হচ্ছে। তবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেও প্রকল্পটির কাজ শেষ হচ্ছে না। সম্প্রতি বাড়তি সময় চেয়ে সেতু বিভাগকে চিঠি দিয়েছে পদ্মা সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন।

যদিও কবে নাগাদ পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে, তা নিশ্চিত করতে বলতে পারছে না পদ্মা সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বা সেতু বিভাগ সংশ্লিষ্টরা। কারণ সেতু বিভাগে পাঠানো চিঠিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের কাজ শেষ করার সম্ভাব্য দুটি সময় প্রস্তাব করা হয়েছে। আর সেতু বিভাগও নিশ্চিত হতে পারছে না কবে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করা সম্ভব। ফলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এখনও কিছু জানানো হয়নি।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থাপনা পরামর্শক যুক্তরাজ্যভিত্তিক রেন্ডাল লিমিটেড অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি প্রতিবেদনটি সেতু বিভাগে জমা দেওয়া হয়।

এতে বলা হয়েছে, মূল সেতু ও নদী শাসনের কাজ শেষ হওয়ার মূল সময়সীমা বহু আগেই শেষ হয়ে গেছে। পরে মূল সেতুর কাজ শেষ করার জন্য চায়না মেজর ব্রিজকে ১৮০ দিন বাড়তি সময় দেওয়া হয়েছিল। পরে তা আরও বাড়িয়ে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। তবে বাস্তব অবস্থা পর্যালোচনাপূর্বক গত বছর নভেম্বরে আরেক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।

সে সময় ঠিকাদারি সংশোধিত পরিকল্পনা জমা দেয়, যাতে বলা হয়েছিল চলতি বর্ষা মৌসুমের আগেই পদ্মা সেতুর সবগুলো স্প্যান বসানো যাবে। তবে করোনার কারণে বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে গেছে। স্প্যান বসানোর কাজ এখনও বাকি রয়েছে এবং তা শেষ করতে চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মূল সেতুর কাজ শেষ করার জন্য নতুন সংশোধিত প্রস্তাব জমা দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত ২০ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে নির্মাণকাজ শেষ করার সম্ভাব্য দুটি তারিখ প্রস্তাব করা হয়েছে। একটি হলো ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর ও অন্যটি ২০২২ সালের ৩০ জুন। তবে এজন্য জনবল নিয়োগ ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার চিত্র ভিন্ন হবে। এতে ব্যয়ের বিষয়টিও সংশ্লিষ্ট রয়েছে। যদিও করোনার কারণে সেতুর নির্মাণকাজের কতটুকু ক্ষতি হয়েছে এবং তা পুষিয়ে নিতে কী ধরনের প্রোগ্রাম নেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

জানতে চাইলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব পেলেও এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। বিষয়গুলো ভালো করে যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। কারণ তাদের প্রস্তাব মেনে নিলে তার জন্য যথাযথ কারণ দেখাতে হবে। আবার প্রস্তাব গ্রহণ না করলে তারও ব্যাখ্যা দিতে হবে। আর তারা দুটি ভিন্ন তারিখ প্রস্তাব করেছে। বিষয়টি কারিগরি ও জটিল।

তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতুর চুক্তি পর্যালোচনার জন্য পৃথক কন্ট্রাক্ট স্পেশালিস্ট আছে। তিনি নিউজিল্যান্ডে আছেন। তার কাছে চায়না মেজর ব্রিজের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। তিনি খুঁটিনাটি পর্যালোচনা করে মতামত জানাবেন। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া ঠিকাদারকে আগামী বছর জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া আছে। তাই তাড়াহুড়ার কিছু নেই। তবে কবে নাগাদ পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

যদিও গত ২৫ আগস্ট অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্মাণকাজ ২০২২ সালে শেষ হবে। করোনাভাইরাস মহামারি ও বন্যায় কাজ বাধাগ্রস্ত না হলে তা ২০২১ সালেই শেষ হতো বলে জানান তিনি। সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদনের পর ওইদিন অর্থমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল সেতু ও নদী শাসন কাজ তদারকির জন্য পরামর্শক সংস্থার মেয়াদ আরও ৩৪ মাস বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এজন্য সরকারের ব্যয় বাড়তি হবে ৩৪৮ কোটি এক লাখ ৩২ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আমাদের সবারই প্রত্যাশা ছিল এবং সেভাবেই কাজটি এগোচ্ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস সবকিছু ওলটপালট করে দিয়েছে। প্রকল্পটি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়েছি। আমরা আশা করি, এর মধ্যেই এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।’

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ২২ মাস নির্মাণকাজ তদারকি এবং আরও ১২ মাস ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ডসহ মোট ৩৪ মাস বাড়ানো হয়েছে পরামর্শকের মেয়াদ। কাজটি করছে কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন (কেইসি) অ্যান্ড এএমপি অ্যাসোসিয়েটস। এক দফা বৃদ্ধির পর বর্তমানে পরামর্শক বাবদ ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯৫৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

এদিকে মূল সেতুর পাশাপাশি পদ্মা সেতু প্রকল্পের নদী শাসন অংশের বাস্তবায়নও করোনার কারণে পিছিয়ে গেছে। ব্যবস্থাপনা পরামর্শকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানোর পর নদী শাসনের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের ৩০ জুন। তবে এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হচ্ছে না। তাই নদী শাসন অংশের ঠিকাদার চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশনকে সংশোধিত প্রস্তাব জমা দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর এ চিঠি দেওয়া হয়। তবে তারা এখনও বর্ধিত সময়সীমার প্রস্তাব করেনি।

উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল অবকাঠামো নির্মাণের চুক্তি মূল্য ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। আর নদী শাসনের চুক্তি মূল্য ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। আর সব মিলিয়ে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। তবে নকশা পরিবর্তন এবং বাস্তবায়ন বিলম্বের কারণে মূল সেতু, নদী শাসন ও প্রকল্প ব্যয় সবই বেড়ে যাবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০