ক্রীড়া ডেস্ক: গোটা জাতি শুক্রবার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছে। এদিন বাড়তি উদ্দীপনায় উদ্ভাসিত হতে তারা চেয়েছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দলের জয়। কিন্তু তাদের আশা পূরণ করতে পারেনি টাইগাররা। উল্টো নির্বিষ আর প্রেরণাহীন ক্রিকেট খেলে তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, সৌম্য সরকাররা, হারলেন ১৬৪ রানের বিশাল ব্যবধানে। এরফলে স্বাগতিকদের কাছে ষষ্ঠবারের মতো ‘হোয়াইটওয়াশড’ হতে হয়েছে রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যদের।
ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে বোলিংয়ের শুরুটা দারুণ হয়েছিল বাংলাদেশের। কিন্তু সে ধারাবাহিকতা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেনি টাইগাররা বাজে ফিল্ডিংয়ের কারণে। এ সুবাদে নিউজিল্যান্ডের দুই তরুণ তারকা ডেভন কনওয়ে ও ড্যারিল মিচেলের সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটে ৩১৮ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে নিউজিল্যান্ড। বড় রান তাড়ায় প্রায় সবাই ছুড়ে আসেন উইকেট। যে কারণে ৪২ ওভার ৪ বলে ১৫৪ রানে থমকে যায় টিম টাইগার্স। সঙ্গে সঙ্গে সফরকারীরা হেরে বসে ১৬৪ রানের বিশাল ব্যবধানে।
৩১৯ রানের লক্ষ্যের পেছনে ছোটাটা কঠিন হবে—এটা জানা ছিল। তাই বলে সামান্য চেষ্ঠাও করবেন না তামিম ইকবালরা। সেটাই তো শুক্রবার দেখা গেল। এদিন ৭ ওভারের মধ্যে ২৬ রানে ফিরে যান টপ অর্ডার তিন ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার ও লিটন। তিন জনকেই বিদায় করেন হেনরি।
শুক্রবার তৃতীয় ওভারে হেনরির বলে খোঁচা মেরে কট বিহাইন্ড হয়ে ফিরেন তামিম। পরের ওভারে পুল করার চেষ্টায় ফাইন লেগে ধরা পড়েন সৌম্য। এদিকে লিটনও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। হেনরির বলে বোল্টের দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরেন তিনি।
দ্রুত টপ অর্ডারের তিন তারকাকে হারিয়ে বিপদে পড়া দলকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিথুন। কিন্তু তারা বেশিদুর এগোতে পারেননি। কাইল জেমিসনের অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বলে পুল করে মিথুন ধরা পড়েন ডিপ স্কয়ার লেগে। এদিকে জিমি নিশামের বলে অহেতুক পুল করতে গিয়ে নিজের উইকে বিলিয়ে দেন মুশফিক। পরে মেহেদী হাসান মিরাজ টিকেন কেবল দুই বল। নিশামের বাজে এক বলে ধরা পড়েন পয়েন্টে। তার বিদায়ের কিছুক্ষণ পরই শেখ মেহেদীও উইকেট ছুড়ে ফেরেন।
স্বীকৃত ব্যাটসম্যানরা না পারলেও শুক্রবার তাসকিন আহমেদ ও রুবেল হোসেন দারুণ ব্যাটিং করেন। তারা রান বেশি করতে না পারলেও উইকেট পড়ে থাকার মানসিকতা দেখান দারুণভাবে। রুবেল হোসেনের সঙ্গে ম্যাচে নিজেদের একমাত্র পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি গড়েন মাহমুদউল্লাহ। শর্ট বল খুব একটা ভোগাতে পারেনি তাকে। খেলেছেন দারুণ সব শট। দ্রুত বাড়িয়েছেন রান। সেঞ্চুরিতে চোখ রেখে এগোচ্ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু ৪ বলের মধ্যে রুবেল ও মোস্তাফিজকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে গুটিয়ে দেন নিশাম।
জিমি নিশাম নিয়েছেন ২৭ রানে ৫ উইকেট। ম্যাট হেনরিও ২৭ রান দিয়েছেন, নিয়েছেন ৪ উইকেট। একটি উইকেট দখল করেছেন কাইল জেমিসন।
এর আগে টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো করে বাংলাদেশও। ৫৭ রানের মধ্যে ফিরিয়ে দেন মার্টিন গাপটিল, হেনরি নিকোলস ও রস টেইলরকে। যে কারণে ম্যাচের অর্ধেক পথ পর্যন্তও বেশ চাপে ছিল নিউজিল্যান্ড। ২৫ ওভারে তাদের সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেটে ১২৪। তবে পরের বিবর্ণ বোলিং আর বাজে ফিল্ডিংয়ে হাত থেকে ছুটে যায় লাগাম। ডেভন কনওয়ে ও ড্যারিল মিচেলের ১৪৭ বলে ১৫৯ রানের জুটি পাল্টা চাপে ফেলে বাংলাদেশকে। বেসিন রিজার্ভের পেসবান্ধব উইকেটে দারুণ ব্যাট করে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন কনওয়ে। ১০৯ বলে ১২৬ রান করেন তিনি। ১৭ চারে ইনিংসটি সাজান বাঁ হাতি এ ব্যাটসম্যান। এদিকে মিচেল ইনিংসের শেষ বলে পৌঁছান সেঞ্চুরিতে। ৯২ বলে করেন ১০০ রান। পঞ্চম উইকেটে তারা করেন সর্বোচ্চ ১৫৯ রানের জুটি। যে কারণে বড় সংগ্রহ পায় নিউজিল্যান্ড। পঞ্চম উইকেটে তারা করেন সর্বোচ্চ ১৫৯ রানের জুটি। যে কারণে বড় সংগ্রহ পায় নিউজিল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩১৮/৬ (গাপটিল ২৬, নিকোলস ১৮, কনওয়ে ১২৬, টেইলর ৭, ল্যাথাম ১৮, মিচেল ১০০, নিশাম ৪, স্যান্টনার ৩; মোস্তাফিজ ১০-০-৮৭-১, তাসকিন ১০-১-৫২-১, রুবেল ১০-১-৭০-৩, মেহেদি ৭-০-৪৬-০, মিরাজ ৫-০-২৩-০, সৌম্য ৮-০-৩৭-১)
বাংলাদেশ: ৪২.৪ ওভারে ১৫৪ (তামিম ১, লিটন ২১, সৌম্য ১, মিথুন ৬, মুশফিক ২১, মাহমুদউল্লাহ ৭৬*, মিরাজ ০, মেহেদি ৩, তাসকিন ৯, রুবেল ৪, মোস্তাফিজ ০; হেনরি ১০-২-২৭-৪, বোল্ট ১০-১-৩৭-০, জেমিসন ৮-০-৩০-১, নিশাম ৭.৪-১-২৭-৫, মিচেল ৪-০-২৫-০, স্যান্টনার ৩-০-৭-০)
ফল: নিউজিল্যান্ড ১৬৪ রানে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ৩-০তে জয়ী নিউ জিল্যান্ড
ম্যাচ সেরা: ডেভন কনওয়ে
সিরিজ সেরা: ডেভন কনওয়ে