Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 6:18 pm

স্বাধীনতা ‘ঘোষণার’ নতুন তথ্য মেজর হাফিজের

নিজস্ব প্রতিবেদক: মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতা ঘোষণার নতুন একটি তথ্য দিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ। তার দাবি ২৭ মার্চের আগেও জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আর সেটি ছিল ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে। তার দাবি, ‘এটাই স্বাধীনতা ঘোষণার প্রকৃত ইতিহাস।’ তার দাবি, পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের প্রস্তুতির কথা জেনেও রাজনৈতিক নেতারা জনগণকে সাবধান করেননি। তারা ‘কেবল বক্তৃতা দিয়ে গেছেন’। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ শুরুর মানুষের ‘ভরসা হয়ে দাঁড়ান’ জিয়াউর রহমান। তিনি এমনও বলেছেন, ‘জিয়াউর রহমান এগিয়ে না এলে মুক্তিযুদ্ধই হতো না।’ গতকাল শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনায় তিনি এসব দাবি করেন। স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন।

হাফিজের দাবি, ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অপারেশন সার্চ

লাইট শুরুর পরই জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সামনে সৈনিকদের একত্র করে জিয়াউর রহমান ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরেই প্রথম ‘স্বাধীনতার ঘোষণা’ দেন। ‘জিয়াউর রহমান সেদিন বলেছিলেন, ‘আজ থেকে আমরা স্বাধীন, আমার বাংলাদেশকে আমি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করছি এবং এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।’

২৭ মার্চ কালুরঘাটে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার যে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন, সেই প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা বলেন, ‘তিনি (জিয়া) ২৭ মার্চে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে আবার স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, যা সবাই শুনেছেন। এটাই স্বাধীনতা ঘোষণার প্রকৃত ইতিহাস।’

হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘পাকিস্তান বাহিনী হামলা চালানোর পর দিগি¦দিক শূন্য হয়ে যখন লাখ লাখ মানুষ ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছিল, সেই সময়ে জনগণের পক্ষে দাঁড়ানোর কেউ ছিল না।’

‘রাজনৈতিক নেতারা জনগণকে প্রস্তুত করেন নাই। শুধু বক্তৃতাই দিয়ে গিয়েছিলেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ২ মার্চ স্বাধীন দেশের পতাকা তোলার পর এটাকে আওয়ামী লীগ ‘পাত্তা দেয়নি’ দাবি করে হাফিজ বলেন, ‘ছাত্রদের ভূমিকায় অভিভূত হয়েছি, বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে ছাত্র-সাধারণ যুবকদের যুদ্ধে যাওয়ার উৎসাহ আমি স্বচক্ষে দেখেছি।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, ‘জনাব শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগের তারা তখন বিভোর ছিল পাকিস্তানের রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য।’

‘এটা দোষের কিছু নাই। তাদের জনগণ ভোট দিয়েছে, হতেই পারে। কিন্তু তাদের (পাকিস্তানি বাহিনীর) প্রস্তুতি নেয়া, তাদের অস্ত্র সম্ভার বৃদ্ধি করা, বিরোধীদের বাঙালিদের বিরুদ্ধে লিপ্ত করা এসব দেখে তাদের (আওয়ামী লীগ) সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তারা এতোই স্বপ্নে বিভোর ছিলেন স্বাধীনতার ডাক তাদের স্পর্শ করেনি।’

জিয়া না থাকলে ‘এখনও পাকিস্তান থাকত’

দুঃসময়ে জনগণের ‘ত্রাতা হিসেবে, বাঙালির উপযুক্ত সন্তান হিসেবে’ নির্যাতিত মানুষের হয়ে জিয়াউর রহমান ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন বলেও মন্তব্য করেন হাফিজ।

তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন যখন এক দুঃসময় চলছিল। সেদিন (২৫ মার্চ) পাকিস্তানিরা যে দানবীয় তৎপরতা শুরু করেছে, ভীতসন্ত্রস্ত মানুষ যেভাবে একেবারে আত্মসমপর্ণ জন্য প্রস্তুত পালিয়ে বেড়াচ্ছে, সেখানে যদি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং ইপিআর মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিদ্রোহ না করত তাহলে মুক্তিযুদ্ধ হতো না।

‘মুক্তিযুদ্ধ না হলে দেশ স্বাধীন হতো না, আজও পাকিস্তান থাকত। ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন যে সংসদ সদস্যরা, তারা ফিরে আসতে পারত না।’

‘এ জন্য কি যুদ্ধ করেছিলাম’

বাংলাদেশ এখন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ‘পদলেহনে ব্যস্ত’ দাবি করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘এজন্য কি আমরা যুদ্ধ করেছিলাম? প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার মনে এই প্রশ্ন।’

“আমার এখনও আশা তরুণদের প্রতি, যুবসমাজের প্রতি, তারা আবার জেগে উঠবে। আমি মনে করি, এই ‘ব্যাংক লুট’, ‘গণতন্ত্র হত্যা’ এবং ‘নতজানু পররাষ্ট্র নীতির’ অবসান এক সময় হবেই।”

হাফিজ বলেন, ‘যে গণতন্ত্রের জন্য আমরা যুদ্ধ করেছি, এই গণতন্ত্র তারা ধূলিসাৎ করেছে। তার একটা ছদ্মরূপ আমরা এখন দেখতে পারছি।

‘কী ধরনের গণতন্ত্র আওয়ামী লীগ চায়, আজকে মানুষের ‘বাক স্বাধীনতা নাই’, ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নাই’, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নাই।’

জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে ও সদস্য পারভেজ রেজা কাননের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের কাদের গণি চৌধুরী, এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, লুৎফর রহমান, হারুন আল রশিদ, কামরুল আহসান, সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।