Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 8:58 pm

স্বাধীনতা ঘোষণা: স্পেনের অর্থনীতির জন্য হুমকি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কাতালোনিয়াও

শেয়ার বিজ ডেস্ক: কাতালোনিয়াকে বলা হয় ‘স্পেনের অর্থনীতির পাওয়ারহাউজ’। অঞ্চলটির স্বাধীনতা ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশটিতে সংকট ক্রমশ ঘনীভ‚ত হচ্ছে। অন্যতম প্রধান বিত্তশালী অঞ্চলটি বিভক্ত হলে তা স্পেনের অর্থনীতির জন্য হবে হুমকিস্বরূপ। অন্যদিনে সংকট ঘিরে সমৃদ্ধশালী এ অঞ্চলটির অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। খবর এএফপি।

সম্পদের দিক থেকে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদের প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী কাতালোনিয়া। ২০১৬ সালে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ১৯ শতাংশ অবদান ছিল এ অঞ্চলটির। স্পেনের ১৭টি অঞ্চলের মধ্যে মাথাপিছু জিডিপির ক্ষেত্রে কাতালোনিয়া চতুর্থ বৃহত্তম।

জাতীয় হারের তুলনায় অঞ্চলটির বেকারত্ব কম। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে স্পেনের বেকারত্ব ছিল ১৩ দশমিক দুই শতাংশ। কাতালোনিয়ার বেকারত্ব ছিল এ হারের নিচে।

স্পেনের অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, কাতালোনিয়া পৃথক হলে দেশটির জিডিপি কমবে এবং বেকারত্ব দ্বিগুণ হবে। অন্যদিকে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতাকামীরা বলছেন, মাদ্রিদকে ট্যাক্স না দিলে তাদের অর্থনীতি আরও ভালো অবস্থানে যাবে।

স্বাধীনতা ঘোষণার আগেই গণভোটের পর সৃষ্ট সংকট অব্যাহত থাকলে আগামী বছর স্পেনের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি নি¤œগতির হবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

একই দিন ওয়াশিংটনে আইএমএফের ইউরোপীয় অঞ্চলের পরিচালক পল থমসেন বলেছিলেন, অনিশ্চয়তা অরও দীর্ঘায়িত হলে স্পেনের ঊর্ধ্বগতির প্রবৃদ্ধি ধাক্কা খেতে পারে। আর স্পেনের উপপ্রধানমন্ত্রী সোররাইয়া সাজেন সান্তামারিয়া উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, যদি এর দ্রæত সমাধান না দেখি, তবে আমরা নিশ্চিত ২০১৮ সালের প্রবৃদ্ধি উদ্বেগজনক হবে।

কাতালোনিয়া স্পেনের শীর্ষ রফতানিকারক অঞ্চল। গত বছর দেশটির মোট রফতানি এক-চতুর্থাংশই এসেছে এ অঞ্চল থেকে। ২০১৫ সালে বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণে মাদ্রিদের পর দ্বিতীয় অবস্থান ছিল কাতালোনিয়ার। মোট এফডিআইর ১৪ শতাংশই হয়েছে এ অঞ্চলে।

গত বছর স্পেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম গাড়ি নির্মাতা অঞ্চল ছিল কাতালোনিয়া। নিশান ও ভক্সওয়াগনের মতো বড় আন্তর্জাতিক গাড়ি নির্মাতার কারখানা এ অঞ্চলে। এছাড়া খাদ্য, কেমিক্যাল ও লজিস্টিক খাতেও এগিয়ে আছে স্বাধীনতাকামী অঞ্চলটি।

তবে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী এ অঞ্চল থেকে ইতোমধ্যে বহু কোম্পানি তাদের সদর দফতর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম ব্যাংক কাইজাব্যাংকও রয়েছে।

গবেষণা, বিশেষ করে সেল, জেনেটিক্স, নিউরোসায়েন্সসহ বিভিন্ন বিজ্ঞানে ১৯৯০ সাল থেকে বিনিয়োগ করে আসছে কাতালোনিয়া। ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর মাথাপিছু আয়ে কাতালোনিয়া ইউরোপের শীর্ষ

অবস্থানে রয়েছে।

স্পেনের র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষ পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটিই কাতোলোনিয়ায়। এর রাজধানী বার্সেলোনা ও কোস্টা ব্রাভা সৈকত দেশটির অন্য যে কোনো অঞ্চলের তুলনায় বেশি পর্যটক আকৃষ্ট করে। গত বছর কাতালোনিয়ায় ১৮ মিলিয়ন পর্যটক এসেছেন, যা দেশটিতে আগত মোট বিদেশি পর্যটকের এক-চতুর্থাংশ। তবে স্বাধীনতা ঘোষণাকে কেন্দ্র করে চলমান সংকটে অক্টোবরে পর্যটকসংখ্যা ১৫ শতাংশ কমে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। হোটেলে বুকিং বছর শেষে ২০ শতাংশ কমছে বলেও জানান তারা।

কেন্দ্রের বাধা উপেক্ষা করে ১ অক্টোবর স্বাধীনতার পক্ষে গণভোটের আয়োজন করে কাতালোনিয়া। এতে ৯০ শতাংশ ভোটার স্বাধীনতার পক্ষে রায় দেন। যদিও মোট জনসংখ্যার মাত্র ৪৩ শতাংশ গণভোটে অংশ নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার কাতালান পার্লামেন্ট স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। পার্লামেন্টে স্বাধীনতার পক্ষে ৭০টি ভোট পড়ে, বিপক্ষে পড়ে ১০টি। পাল্টা জবাবে কাতালোনিয়ায় প্রত্যক্ষ শাসন জারি করেছে স্পেন। এর মধ্য দিয়ে কাতালোনিয়া সংকট আরও ঘনীভ‚ত হয়েছে।

এদিকে ইউরোপের বড় কোনো শক্তিই কাতালোনিয়ার স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেবে না। যুক্তরাষ্ট্রও কাতালোনিয়ার স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেবে না বলে জানানো হয়েছে। স্পেনের সার্বভৌমত্বের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছে জার্মানি। অন্যদিকে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাহয়ের কাজের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে ফ্রান্স।