Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 10:29 am

স্বাধীন স্বাধীন দিকে দিকে

কাজী সালমা সুলতানা: ২১ ডিসেম্বর ১৯৭১। বিজয়ের পাঁচ দিন পর পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী নাটোরে মিত্রবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণের পর মুক্ত হয় নাটোর।

১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজি ঢাকায় আত্মসমর্পণ করলেও নাটোর ছিল অবরুদ্ধ। পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর দ্বিতীয় হেড কোয়ার্টার হওয়ার কারণে নাটোরে তখনও অবস্থান করছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রায় আট হাজার সেনাসদস্য।

২১ ডিসেম্বর তৎকালীন গভর্নর হাউস তথা বর্তমান উত্তরা গণভবনে ১৪১ জন অফিসার, ১১৮ জন জেসিও, পাঁচ হাজার ৪৫০ জন সিপাহি ও এক হাজার ৮৫৬ জন প্যারামিলিশিয়া বাহিনী নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অধিনায়ক মেজর জেনারেল নজর শাহ ও ব্রিগেডিয়ার নওয়াব আহম্মেদ আশরাফ আত্মসমর্পণ করেন।

এদিন রাওয়ালপিন্ডিতে বিদেশি সংবাদদাতাদের জন্য নৈশভোজের আয়োজন করেন পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলি ভুট্টো। শেখ মুজিবকে মিয়াওয়ালি কারাগার থেকে মুক্ত করে প্রথমে ইসলামাবাদ ও পরে পিন্ডিতে নিয়ে গৃহবন্দি রাখা হয়। ভুট্টো শেখ মুজিবের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন।

১৮ ডিসেম্বর ডিপি ধর কলকাতা এসে পৌঁছার পর ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত  প্রয়োজনীয় বিষয়ে বাংলাদেশ মন্ত্রিসভার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলে। সে সময় ঢাকা ও দিল্লির মাঝে যোগাযোগব্যবস্থা যা ছিল, তাতে দুই দেশের সরকারের পক্ষে জরুরি বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব ছিল না।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্রকে সচল করা এবং বিচ্ছিন্ন ও বিপর্যস্ত অর্থনীতি জরুরি পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে ভারতীয় সহযোগিতার পরিসর নীতিগতভাবে স্বীকৃত হওয়ার পর স্থির হয় বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের নির্দিষ্ট প্রয়োজন নিরূপণ করা।

বাংলাদেশ সরকার আবুল ফাতাহকে পররাষ্ট্র সচিব নিয়োগ করে। তিনি মাহবুব আলম চাষীর স্থলাভিষিক্ত হলেন। ২১ ডিসেম্বর দি গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক নিবন্ধে ভুট্টো কর্তৃক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবিলম্বে মুক্তিদানের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করা হয়। এই নিবন্ধে বলা হয়, ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। কেবল শেখ মুজিবুর রহমান এই অবনতি রোধ করতে পারেন। তার দেশে ফিরে আসতে আর কতদিন দেরি হবে? আওয়ামী লীগ ও গান্ধী শেখ মুজিবের মুক্তির ব্যাপারে পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দিদের ব্যবহার করা সম্পর্কে ইঙ্গিত করেন। এ ব্যাপারে একদিনও দেরি করা চলবে না, তাহলে অমঙ্গল ঘটবে।

এদিন পোল্যান্ডে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আবুল বশিরুল আলম বাংলাদেশের পক্ষে আনুগত্য ঘোষণা করেন। কয়েক ডজন পোলিশ সাংবাদিকের উপস্থিতিতে তিনি তার বাসভবনে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধের কারণে দেড় থেকে দুই কোটি উদ্বাস্তু হয়েছে বলে এ-বিষয়ক কর্মরত ব্রিটিশ সংস্থাগুলো জানায়। এছাড়া ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী উদ্বাস্তু সংখ্যা মিলে মোট উদ্বাস্তুর সংখ্যা তিন কোটি মানুষ। এদিন মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি কর্নেল এমএজি ওসমানী ঢাকা এসে পৌঁছেন। কলকাতার বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারের প্রতিনিধি ডিপি ধরের সঙ্গে উদ্বাস্তু প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, মূলধারা ৭১ ও ৭১-এর দশ মাস