স্বাধীন স্বাধীন দিকে দিকে

কাজী সালমা সুলতানা: ২৫ ডিসেম্বর ১৯৭১। ঢাকার হাতিরপুলে এক জনসভায় ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (মোজাফফর) নেতারা বলেন, তাদের দল বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা অনুযায়ী একটি প্রকৃত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে সরকারকে সাহায্য করবে। যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে তারা বলেন, সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এখনও বাংলাদেশের স্বাধীনতা নস্যাতের জন্য সক্রিয় রয়েছে। তারা বলেন ইয়াহিয়া খান যখন লাখ লাখ বাঙালি হত্যা করছিল যুক্তরাষ্ট্র তখন নীরব ভূমিকা পালন করছিল। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর আক্রমণের মুখে যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছিল তখন তারা আবার তৎপর হয়ে ওঠে। বেগম মতিয়া চৌধুরী স্বাধীনতার পক্ষের দলগুলোর সমন্বয়ে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ডিপি ধর বঙ্গভবনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে বলেন, বাংলাদেশ সবার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান চায়। তিনি নতুন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতিদানের জন্য বিশ্বের সব দেশের প্রতি আহ্বান জানান।

চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে কী সম্পর্ক হবেÑএ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো দেশের সঙ্গে শত্রুতার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এই বাস্তব সত্যটিকে মেনে নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী সব রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন শিগগিরই দেশকে শাসনতন্ত্র দেয়া হবে এবং ভবিষ্যতে শাসনতন্ত্রে অবশ্যই জনগণের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটবে। তিনি বলেন, জাতির সামনে প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে, দেশের বিপর্যস্ত অর্থনীতির পুনর্গঠন এবং ভারতে আশ্রয় নেয়া বাংলাদেশের শরণার্থীদের পুনর্বাসন করা। তিনি আরও বলেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জনসাধারণ শুধু আওয়ামী লীগের ছয় দফা কর্মসূচির প্রতিই ভোট দেয়নি, বরং ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের প্রতিও ভোট দিয়েছে।

মুক্তিবাহিনীকে নিরস্ত্রীকরণ সম্পর্কে তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, যারা দখলদার বাহিনীর হাত থেকে দেশের মুক্তির জন্য অস্ত্র ধারণ করেছেন, তারা সাধারণ লোক নন, বরং তারা অসাধারণ মানুষ। তারা জানেন, কখন অস্ত্রধারণ করতে হয় এবং কখন গঠনমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করতে হয়।

আন্তর্জাতিক রেডক্রস সমিতির একটি বিমান ওষুধপত্র, বিভিন্ন সাহায্যদ্রব্য ও রেডক্রস কর্মীদের নিয়ে ঢাকায় পৌঁছেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক রেডক্রসের সাহায্যবাহী এটাই প্রথম বিমান।

এদিন পুলিশ ডিরেক্টরেটের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দখলদার পাকিস্তান বাহিনীর আরও বহু দোসরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন পিডিপি’র সভাপতি মওলানা আলতাফ হোসেন, সহসভাপতি ও উপনির্বাচনের এমএনএ মওলানা মোসলেহ উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুস্তাফিজুর রহমান, সাবেক মন্ত্রী ও ময়মনসিংহ জেলা মুসলিম লীগের সভাপতি ফখরুদ্দিন, ময়মনসিংহ জেলা মুসলিম লীগের সম্পাদক খোরশেদ আহমদ খান, ময়মনসিংহ জেলা মুসলিম লীগের কোষাধ্যক্ষ ডা. এ. হামিদ, ময়মনসিংহ জেলা নেজামে ইসলামের সভাপতি মওলানা ফয়জুর রহমান, ডিএসপি ইসরাইল প্রমুখ।

তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও মূলধারা ৭১

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০