কাজী সালমা সুলতানা: ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১। এদিন বোম্বাইয়ের সাপ্তাহিক ‘ব্লিৎস’ পত্রিকার সম্পাদক আর কে কারানজিয়া পাকিস্তানি ফ্যাসিস্ট বাহিনীকে বাংলাদেশে নরহত্যা ও ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত করে বিচারের জন্য একটি যুদ্ধ অপরাধ কমিশন গঠনের আহ্বান জানান। ঢাকার বার্তা প্রতিষ্ঠান বিপিআই পরিবেশিত খবরে বলা হয়, ‘ব্লিৎস’ পত্রিকার সাম্প্রতিক সংখ্যায় ‘শয়তানের বীভৎস মুখ দর্শনে’ নামে লিখিত একটি নিবন্ধে কারানজিয়া বলেন, এ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনী সম্পর্কে যে তথ্য লাভ করেছেন, তাতে এটাই প্রমাণিত হয়, পাকিস্তানি সৈন্যরা যুদ্ধাপরাধীÑযুদ্ধবন্দি নয়। নিয়াজি, ফরমান আলি গং জেনেভা কনভেনশন অনুসারে যুদ্ধবন্দির মর্যাদা পেতে পারে না। তারা খুনি, তারা নারীর মর্যাদা-হরণকারী, তারা সৈনিকের মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। তিনি আরও বলেন, কমলাপুরে আহত ৩৬ ভারতীয় সৈন্যকে পাকিস্তানি কমান্ডিং অফিসারের নির্দেশে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল শ্যাম মানেকশ এদিন সকালে আলাদাভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বাংলাদেশ বাহিনীর প্রধান সেনাপতি কর্নেল এমএজি ওসমানীও সে সময় উপস্থিত ছিলেন।
বিবিসির এক খবরে বলা হয়, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো পিন্ডিতে অন্তরীণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
পুরানা পল্টনে আওয়ামী লীগ অফিসে স্বাধীনতা-উত্তর প্রথম কর্মিসভায় ভাষণদানকালে অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার জনগণেরই সরকার। তিনি তার মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও নিজকে জনগণের সেবক বলে অভিহিত করেন।
এদিন বিকালে বঙ্গভবনে চার নতুন মন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠান শেষে সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা পুরানা পল্টনে আওয়ামী লীগ অফিসে যান। আওয়ামী লীগ কর্মী ও নেতারা অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান ও তার মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের বিপুল সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ও ঢাকা শহর আওয়ামী লীগ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা কর্মীদের উদ্দেশে ভাষণ দেন।
এদিন বাংলাদেশে দখলদার বর্বর পাকবাহিনীর সঙ্গে সহায়তা করার অভিযোগে আরও কয়েকজন দালালকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হচ্ছেনÑড. হাসান জামান, সাবেক পরিচালক, পাকিস্তান-বিষয়ক একাডেমি; নাসিরুদ্দিন আহমদ চৌধুরী, সিলেট, সদস্য, নেজামে ইসলামী, সাবেক প্রাদেশিক মন্ত্রী; সম্প্রতি তথাকথিত উপনির্বাচনে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য মাওলানা আতাহার আলী, কিশোরগঞ্জ শহর; মাওলানা সাঈয়েদুর রহমান, ময়মনসিংহ শহর; বাহাউদ্দিন আহমদ, সাবেক এডিশনাল এসপি, সিলেট; মো. এসবি দোজা, সিও (রেভ) কোতোয়ালি, ঢাকা; নূরুল আমীন, সুপারিনটেনডেন্ট, তেজগাঁও টেলিফোন ওয়ার্কশপ; শাহাবুদ্দিন, ফোরম্যান, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই; মাওলানা বজলুর রহমান, দয়াপুর, কুমিল্লা; এসএম মুজতবা খুরশিদ, সাবেক ওসি, লালবাগ থানা, ঢাকা; এসআই ইউসুফ আলী চৌধুরী, সাবেক ওসি, কালীগঞ্জ থানা, ঢাকা; এসআই মো. ইসহাক, সাবেক ওসি, মোহাম্মদপুর থানা, ঢাকা; হাবিলদার নওয়াব খান, ইপিসিএএফ; শামী, মুজাহিদ কমান্ডার, মিরপুর; মো. আকিল (মুজাহিদ), মিরপুর; মো. আলী ওরফে মো. আখতার আলী (মুজাহিদ), মিরপুর; মান্না ওরফে আবদুল আজিজ (মুজাহিদ), মিরপুর; শুর মোহাম্মদ (মুজাহিদ), মিরপুর; শাহাবুদ্দীন, শত্রুবাহিনীর এজেন্ট; আবদুল জহীর (রাজাকার), নোয়াখালী; আনকা ওহী (রাজাকার), পার্বত্য চট্টগ্রাম; আবুল বাশার মো. শাহজাহান (আলবদর), ফেনী, নোয়াখালী; সৈয়দ মো. মোহেন কাদের, মোহাম্মদপুর, ঢাকা; আনিসুর রহমান, কমান্ডার (আলবদর); বিলাল হোসেন, কমান্ডার (আলবদর); এসএ সিদ্দিকী, মিরপুর, কমান্ডার (আলবদর); এবিএম খালেক মজুমদার (আলবদর); ওমর হায়াত, মিরপুর; সিরাজদ্দীন, সদস্য, শান্তি কমিটি; আশরাফ আলী সদস্য (আলবদর), ফরিদাবাদ; এসএম মুনিবুল হক, আহ্বায়ক, শান্তি কমিটি; সৈয়দ এরশাদ হোসেন, তেজগাঁও, ঢাকা; সৈয়দ মো. মহসিন, মোহাম্মদপুর, সদস্য (আলবদর) এবং মো. হানিফ, মিরপুর।
তথ্যসূত্র : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।