কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়া শহরের বেশিরভাগ মার্কেটে শৌচাগারের সংকট রয়েছে। গণশৌচাগার-সংকটের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন এসব মার্কেটের দোকান মালিক ও কর্মচারীরা। একই সঙ্গে ভোগান্তির শিকার হন এসব মার্কেটে আসা ক্রেতারা। শিশুদের ক্ষেত্রে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন ক্রেতারা। এসব মার্কেটের ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের ভরসা মসজিদের শৌচাগার।
কুষ্টিয়া পৌরসভার ওয়েবসাইটের সবশেষ চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তথ্যমতে, বর্তমানে ‘ক’ শ্রেণির এ পৌরসভার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৮৬৯ সালের ১ এপ্রিল। ৪২.৭৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ পৌরসভা ২১টি ওয়ার্ডে বিভক্ত। এর হোল্ডিং সংখ্যা ৩৫ হাজার ৯১৭টি, পরিবার সংখ্যা ৫৯ হাজার ৫৩৪টি এবং লোকসংখ্যা ২ লাখ ৪৭ হাজার ৬৬ জন। আর গণশৌচাগার রয়েছে মাত্র ৫টি।
কুষ্টিয়া শহরের মূল সড়ক এনএস রোড (নবাব সিরাজউদ্দৌলা সড়ক)। এ সড়কেই কুষ্টিয়ার প্রধান পাইকারি ব্যবসা কেন্দ্র বড়বাজার, প্রধান কাঁচাবাজার মিউনিসিপ্যাল মার্কেট, বঙ্গবন্ধু সুপার মার্কেট, পৌর সভার কয়েকটি মার্কেট, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মার্কেট ও ব্যক্তি মালিকানাধীন মার্কেট রয়েছে। এসব মার্কেটে শহরের বিভিন্ন এলাকা এবং বাইরে থেকে মানুষ কেনাকাটা করতে আসেন। সরকারি ছুটির দিনে ভিড় হয় অন্য দিনের চেয়ে তুলনামূলক বেশি। মার্কেটগুলো ছাড়া কুষ্টিয়া শহরের জনসমাগমের অন্যতম এলাকা মজমপুর। এখানে বাসডিপো, লোকাল ও ঢাকা রুটের বাসগুলোর কাউন্টার, দৌলতপুর, মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলার বাসিন্দারা এ পথ দিয়ে শহরে প্রবেশ করেন। এ পয়েন্ট দিয়ে মেহেরপুর ও পাবনা বা উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যেতে হয়। শহরের অন্যতম ট্রানজিট পয়েন্ট এলাকাটিতে কোনো গণশৌচাগার নেই। এছাড়া শহরে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কয়েক হাজার রিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটো চলাচল করে। এগুলোর চালকরা শৌচাগারের অভাবে রাস্তার পাশের ড্রেনে মূত্র ত্যাগের কাজটি করে।
সরেজমিন দেখা গেছে, কুষ্টিয়া হাইস্কুলের মালিকানাধীন আব্দুল ওয়াহেদ মার্কেটে (দ্বিতল), আশরাফুল হক মার্কেট (দ্বিতল), কুষ্টিয়া পৌরসভার মালিকানাধীন আগা ইউসুফ মার্কেট (দ্বিতল), টিঅ্যান্ডটি মার্কেট (দ্বিতল), সুকান্ত বিপণি (১ম ব্লক, থানার সামনে), ইসলামিয়া কলেজের মালিকানাধীন ইসলামিয়া কলেজ মার্কেট (তৃতীয় তলা), চাঁদ সুলতানা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মার্কেট, লালন শাহ মার্কেটে কোনো শৌচাগার নেই।
এর মধ্যে সুকান্ত বিপণি (১ম ব্লক, থানার সামনে) আগে একটি শৌচাগার থাকলেও নতুন করে নির্মাণের সময় শৌচাগারটি তার অস্তিত্ব হারিয়েছে। মার্কেটগুলোয় প্রায় ৭০০ দোকান রয়েছে। এছাড়া বড়বাজারে প্রায় এক হাজার দোকান রয়েছে। এখানকার ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের ভরসা মার্কেটের পেছনের স্কুল মাঠ।
সম্প্রতি কুষ্টিয়া হাইস্কুলের মালিকানাধীন আব্দুল ওয়াহেদ মার্কেটে ছিট কাপড় কিনতে এসেছেন কবুরহাট এলাকার এক নারী। সঙ্গে তার ৬ বছর বয়সী মেয়ে শিশু। হঠাৎ শিশুটি প্রসাব করতে চাইলে, তাকে দোকান মালিক মার্কেটের পেছনে স্কুল মাঠে নিতে বলেন। একইদিন বিকেলে পৌরসভার মালিকানাধীন কমরেড রওশন আলী মার্কেটের তিন তলায় শৌচাগারের গিয়ে দেখা যায়, সেটির অবস্থা ভালো নয়। নোংরা, দুর্গন্ধযুক্ত, মেঝে পানিতে ভেজা, কাদা হয়ে আছে।
কুষ্টিয়া চেম্বারের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও বড়বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মোকারম হোসেন মোয়াজ্জেম বলেন, বড় বাজার রেলগেট থেকে আমলাপাড়া মোড় পর্যন্ত আমাদের সমিতির আওতাভুক্ত। বড় বাজার ইজারা দিয়ে পৌরসভা প্রতি বছর ৭-৮ লাখ টাকা আয় করে। এই সমিতির আওতায় প্রায় ৪ হাজার ব্যবসায়ী, প্রতিটি দোকানে গড়ে ৩ জন করে ধরলেও মোট ১২ হাজার জন কাজ করেন। শৌচাকার্যে বড় বাজার মসজিদ, আমলাপাড়া মসজিদ ভরসা।
তিনি আরও বলেন, জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির প্রায় প্রতিটি মাসিক সভায় শৌচাগারের ব্যাপারটি তুলে থাকি। দোকান মালিক কল্যাণ সমিতি কুষ্টিয়ার সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, এনএস রোডের আমলাপাড়া মোড় থেকে থানা মোড় হয়ে নারিকেল তলা পর্যন্ত আমাদের সমিতির আওতাভুক্ত। এ এলাকার সব মার্কেটে শৌচাগার সুবিধা নেই। আমাদের সদস্য ১ হাজার ৭২৮ জন আর মালিক-কর্মচারী মিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার। কয়েকটি মার্কেটে শৌচাগার রয়েছে, কিন্তু এত লোকের জন্য সেগুলো যথেষ্ট নয়। আমরা ব্যবসায়ী নেতারা চেষ্টা করে যাচ্ছি, মেয়রকে জানিয়েছি পর্যাপ্ত শৌচাগারের ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
কুষ্টিয়া চেম্বারের পরিচালক ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি (থানার মোড় থেকে মজমপুর গেট) এসএম কাদেরী শাকিল বলেন, কুষ্টিয়া পৌরসভা পর্যাপ্ত গণশৌচাগার তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা তাদের কয়েকটি মার্কেটে শৌচাগার তৈরি করেনি। আবার অধিকাংশ মার্কেট মালিকরাও তাদের মার্কেটে কোনো প্রকার শৌচাগার ব্যবস্থা না রেখে, টাকাকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে মার্কেট সম্পন্ন করেছে। এসব ক্ষেত্রে ভবন বা মার্কেটের নকশা অনুমোদনে পৌরসভাকে আরও কঠোর হতে হবে।
কুষ্টিয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, সুকান্ত বিপণি, কমরেড রওশন আলী ও বঙ্গবন্ধু মার্কেটে পৌরসভার শৌচাগার আছে। অধিকাংশ মার্কেট মালিকরা তাদের মার্কেটে কোনো প্রকার শৌচাগার ব্যবস্থা না রেখে মার্কেট তৈরি করেছে। এসব ক্ষেত্রে ভবন বা মার্কেটের নকশা অনুমোদনে পৌরসভার ভূমিকা জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া নাগরিক কমিটির সভাপতি প্রফেসর ডা. এসএম মুস্তানজিদ বলেন, যে কোনো জনসমাগমস্থলে গণশৌচাগারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। যানজটের কারণে শৌচাগারের প্রয়োজনীতা আরও বেড়ে গেছে। এছাড়া শহরে মানুষের ব্যাপক মুভমেন্ট। জেনারেল হাসপাতালের সামনে একটি আধুনিক ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার হয়েছে। এ রকম গোটা দশেক স্পটে শৌচাগার করা যায়, তাহলে আমার মনে হয়, মানুষের অনেক বেশি সুবিধা হবে। তিনি আরও বলেন,
বেশিক্ষণ প্রস াব আটকে রাখলে কিডনিতে পাথর বা ইনফেকশন হতে পারে। এতে স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।