স্বাস্থ্যবান তরুণ প্রজন্মকে গড়তে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ জরুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকার যখন তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছে, ঠিক সেসময় ই-সিগারেট প্রসারে সিগারেট কোম্পানির প্রচেষ্টা দেশের জনস্বাস্থ্য ও উন্নয়নের জন্য হুমকি। সিগারেট কোম্পানিগুলো মিথ্যাচারের মাধ্যমে ই-সিগারেট প্রসারের লক্ষ্যে কাজ করছে। ই-সিগারেট আসক্তি থেকে তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে ই-সিগারেট দ্রুত নিষিদ্ধ করা জরুরি।

পার্লামেন্ট মেম্বারস্ ক্লাবের সভাকক্ষে রোববার (২০ আগস্ট) ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি) আয়োজিত ‘ই-সিগারেট: মিথ ও বাস্তবতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

টিসিআরসির প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু। বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী আ.ফ.ম. রুহুল হক, সংসদ সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল, অ্যাডভোকেট মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার ও অ্যাডভোকেট আদিবা আনজুম মিতা। অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের (এনটিসিসি) সমন্বয়কারী মো. হোসেন আলী খোন্দকার ও বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি রখফার সুলতানা।

তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ হিসেবে বক্তব্য দেন রাখেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশের ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ড. সৈয়দ মাহফুজুল হক, দ্য ইউনিয়নের পরামর্শক ফাহিমুল ইসলাম, কারিগরি পরামর্শক সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের হেড অব প্রোগ্রামস মো. শফিকুল ইসলাম প্রমুখ। উন্মুক্ত আলোচনায় তামাক বিরোধী সংগঠনের বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ মতামত তুলে ধরেন। গোলটেবিল বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেলের (টিসিআরসি) প্রকল্প পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক মো. বজলুর রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিসিআরসির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ফারহানা জামান লিজা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামসুল হক টুকু বলেন, স্বাস্থ্য নাগরিকের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। ই-সিগারেটসহ অন্যান্য যা কিছু তামাক জাতীয় সবই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং মানবদেহের জন্য হারাম। বাংলাদেশের যে কোনো অপরাধের মূলে তামাক, ই-সিগারেটসহ সকল মাদকদ্রব্য। ধূমপানে বিরত থাকতে বলার জন্য অধুমপায়ীর আইনি অধিকার থাকা দরকার। তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সব রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অভাব রয়েছে। তরুণ সমাজ মাদক, ধূমপান ও ই-সিগারেটে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে সেখান থেকে তরুণ সমাজকে ফেরাতে হবে। ধূমপান ছাড়ার বিকল্প ই-সিগারেট হতে পারে না। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন আকারে আনতে সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে। ধূমপান, ই-সিগারেট ও তামাক সবাই জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ই-সিগারেট আমদানি নিষিদ্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চাপ দেয়া দরকার। আমরা ধুমপানমুক্ত ও ই-সিগারেটমুক্ত বাংলাদেশ চাই।

আদিবা আনজুম মিতা বলেন, বর্তমানে তরুণ ও শিশুরা ধুমপানসহ বিভিন্ন নেশায় আসক্ত হচ্ছে। এভাবেই তরুণরা শিশুরা ই-সিগারেটে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ধুমপানমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সব ধরনের তামাক ও ই-সিগারেট অবশ্যই নিষিদ্ধ হওয়া দরকার। রানা মো. সোহেল বলেন, ই-সিগারেট কোনভাবেই ক্ষতি কমানোর কোন পণ্য হতে পারে না। আগুনের লেলিহানের মতো বেড়েই চলেছে এর ব্যবহার। তাই এখনই এটি নিষিদ্ধের কোন বিকল্প হতে পারে না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হোসেন আলী খন্দকার বলেন, সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, এ আইন সংশোধন হলে জনস্বাস্থ্য উপকৃত হবে।

বক্তারা বলেন, সরকার সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা করেছে, তরুণরা ধুমপানের পিছনে যে টাকা ব্যয় করে তা যদি মাসে পেনশনের জন্য সঞ্চয় করে তবে তরুণদের ভবিষৎত নিশ্চিত হবে এবং দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নত হবে। আমাদের দেশে হাসপাতালের ওপর চাপ কমাতে এবং রোগ কমাতে তামাকের ব্যবহার কমাতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, তামাক বিরোধী আন্দোলনে ব্যাপক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তামাক বিরোধী আন্দোলন না থাকলে আরও ব্যাপকহারে মানুষ তামাকে আসক্ত হতো। তামাকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ই-সিগারেট। এইচএস কোডের মাধ্যমে ই-সিগারেট আনার সুযোগ দেয়া হয়েছে, অনতিবিলম্বে তা বন্ধ করা উচিত। বাংলাদেশে ভয়াবহ পর্যায়ে যাবার আগে ই-সিগারেটকে এখনই আটকানো দরকার।

জনস্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে ই-সিগারেটকে নিষিদ্ধ করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছে। আইনটি সংশোধন করা জরুরি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০