শুধু পরিচিতজন ও শুভানুধ্যায়ীদের সহায়তায় গত আট বছরে জেলার প্রায় এক লাখ অসহায় মানুষকে কোনো খরচ ছাড়াই স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ দিয়েছে পাবনার মানবকল্যাণী সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ‘তহুরা আজিজ ফাউন্ডেশন’। এখনও অব্যাহত রয়েছে তাদের এই মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানবসেবার ধারা। এখানকার সেবাগ্রহীতারা নিতান্তই সমাজের সুবিধাবঞ্চিত অসহায় মানুষ। সন্তান দেখভাল না করা বিধবা মা, স্বামী পরিত্যক্তা অসহায় নারী, পতিতা, হরিজন, বিকলাঙ্গ, রাস্তার ফকিরÑকোথায়ও কিছু বলার জায়গা নেই এমন মানুষদের কাছে আস্থার ঠিকানার নাম ‘তহুরা আজিজ ফাউন্ডেশন’।
পাবনা শহরের কালাচাঁদপাড়ায় প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান। সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের দর্শন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর দেওয়ান আজিজুল ইসলাম ২০১১ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। সদালাপী এই শিক্ষাবিদের স্ত্রী জান্নাতুন তহুরা ২০০২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। স্ত্রীর প্রতি অগাধ ভালোবাসা থেকে নিজের ও স্ত্রীর নাম একীভূত করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন তহুরা আজিজ ফাউন্ডেশন। তিনি মনে করেছিলেন, প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষ বিনা মূল্যে সেবা পেয়ে তার মরহুম স্ত্রী ও তার জন্য দোয়া করবেন পরম করুণাময়ের কাছে। তার প্রার্থনা ও চেষ্টা পেয়েছে সফলতা আর উপকৃত হচ্ছে অসহায় মানুষ।
এখানে সেবা নিতে আসা বেশিরভাগই দূর গ্রামের জনপদের তৃণমূলের মানুষ। জন থেকে জনে এভাবে এখন অসংখ্য মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে তহুরা আজিজ ফাউন্ডেশনের নাম। স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার সব মানুষেরই রয়েছে। এক গবেষণায় জানা গেছে, শুধু চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়েই প্রতিবছর বাংলাদেশের চার শতাংশ মানুষ নেমে যাচ্ছে দারিদ্র্যসীমার নিচে। তাই সবার মিলিত চেষ্টাকে একটি জায়গায় এনে সেখান থেকে সেবা ছড়িয়ে দেওয়ার এক উদ্যোগী নাম তহুরা আজিজ ফাউন্ডেশন, হয়েছেও তাই।
প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ দেওয়ান আজিজুল ইসলামের বড় ছেলে দেওয়ান মাহবুবুল ইসলাম সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি ওষুধ কোম্পানির অধীনে পাবনায় চাকরি করেন। শিক্ষক আজিজুল ইসলামের এখন বয়স হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি দেখাশোনা করেন তার ছেলে দেওয়ান মাহবুব। তার চাকরি থেকে পাওয়া টাকা আর সামর্থ্যবান কয়েকজন কাছের বন্ধুর মাসিক ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা করে সহযোগিতা নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন এই প্রতিষ্ঠানটি।
কোনো খরচ ছাড়া এখানে সপ্তাহে তিন দিন সেবা দেওয়া হয়। প্রতি শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এবং রোববার ও মঙ্গলবার বেলা ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অসহায় মানুষেরা সেবা নেন। সেবা গ্রহীতারা বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের পাশাপাশি পাচ্ছে প্রয়োজনীয় ওষুধও। জেলার সব থানা পর্যায়ের অসহায় মানুষ আসছে এখানে। জেলার সীমানা পেরিয়ে পৌঁছে গেছে প্রতিষ্ঠানটির নাম। আর তাই পাশের জেলাগুলো থেকেও আসছে সেবাপ্রত্যাশী অসহায় মানুষ।
মানবপ্রেমে উদ্বুদ্ধ কয়েকজনের শুভার্থীর সহযোগিতা নিয়ে চালিয়ে নেওয়া এই প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক দেওয়ান মাহবুবুল ইসলাম জানান, কোনো ধরনের সরকারি ও বেসরকারি অনুদান ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি চালিয়ে নেওয়া অনেক সময়ে দুরূহ হয়ে পড়ে। কিন্তু কয়েকজন মানুষের ঐকান্তিক সহযোগিতায় এখনও টিকে আছে এবং কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক বন্ধু আছেন যারা টাকা দিয়ে, ওষুধ দিয়ে সহযোগিতা করে চলেছেন। তাদের দানে দেওয়া ওষুধই দেওয়া হচ্ছে এসব অসহায় মানুষকে। সবাই যদি এসব অসহায় মানুষের দিকে তাকিয়ে দান করেন তাহলে তারা উপকৃত হবে। যে একজন অসহায় রুগীকে ওষুধ দান করতে চান সে ইচ্ছা করলে নিজ হাতেও ওই রোগীর হাতে এখানে এসে ওষুধ তুলে দিতে পারেন। কার্যক্রম দেখতে আসতে পারেন। এমনকি নিজে যদি সম্পৃক্ত হতে চান সেটিও জানাতে পারেন। মূলত একটা মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে মানবসেবাতে নিজেকে জড়িয়ে রাখার মাধ্যমে যে আত্মিক প্রশান্তি, সেটি আর অন্য কোনো উপায়ে পাওয়া সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। মানুষের সেবায় যত মানুষ এগিয়ে আসবে তত সেবা পাবে বিপন্ন মানবতা। তিনি সবাইকে যে কোনো সহযোগিতা ও যে কোনো পরামর্শ দেওয়ার জন্য মোবাইল ফোনে (০১৭৭৯-৩৩২৮৯০) যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
শাহীন রহমান