স্বাস্থ্যের মিঠুর সম্পদ জব্দ ও বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাস্থ্য খাতের আলোচিত ও প্রভাবশালী ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম ওরফে মিঠুর ৭৪ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা এবং তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে গত বুধবার এ বিষয়ে পৃথক আবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। কমিশনের অনুমোদনক্রমে অনুসন্ধানকারী টিম প্রধান উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান এমন আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, অনুসন্ধান পর্যায়ে আপাতত তার বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক বা অবরুদ্ধ করার জন্য অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা চিঠি দিয়েছেন। পরবর্তীতে অনুসন্ধান কর্মকর্তা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।

মিঠুর বিদেশগমন রহিত করতে গতকাল (১৮ অক্টোবর) বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল শাখা (এসবি) বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে গতকালই তার ৭৩ কোটি ৭৪ লাখ ৭১ হাজার ৭৩৮ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করতে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ১০ ও ১৪ ধারা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা ২০০৭-এর ১৮ ধারায় মহানগর স্পেশাল জজ আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আবেদনে জব্দ করা সম্পদের মধ্যে ১৬ কোটি ৪১ লাখ ৯১ হাজার ৫০০ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৫৭ কোটি ৩১ লাখ ৮০ হাজার ২৩৮ টাকা অস্থাবর সম্পদের তথ্য রয়েছে।

দুদক সূত্রে জানা যায়, মোতাজ্জেরুল ইসলাম (মিঠু) সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতে মালামাল সরবরাহ ও উন্নয়ন কাজে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন; যার মধ্যে দেশের ১২ হাসপাতালের কেনাকাটায় অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে অনুসন্ধানে। হাসপাতালগুলো হলোÑ কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল মৌলভীবাজার, জেনারেল হাসপাতাল গোপালগঞ্জ, আইএইচটি সিলেট, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, ঢাকা ডেন্টাল হাসপাতাল এবং রাজধানীর সিএমএসডি। এসব হাসপাতালে মিঠু সিন্ডিকেট করে অতি উচ্চ মূল্য দেখিয়ে নি¤œমানের পণ্যসামগ্রী সরবরাহ, দরপত্রের শর্তানুযায়ী পণ্য সরবরাহ না করা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে পণ্যসামগ্রী সরবরাহ না করেই বিল উত্তোলন এবং অপ্রয়োজনীয় ও অযাচিত পণ্য সরবরাহ করেছে।

মোতাজ্জেরুল ইসলামের (মিঠু) বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে বিপুল অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। অবৈধ সম্পদের মধ্যে রয়েছে- রাজধানীর বানানী ডিওএইচএস এলাকার রোড-৪/এ-তে ৫ কাঠা জমিতে পাঁচতলা ভবন, বানানীর ৬ নং রোডের ব্লক সিতে ১ হাজার ৮২৫ বর্গফুট ফ্ল্যাট, উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের ১০ নং রোডে ৫.২৫ কাঠা জমিতে চারতলা ভবন, একই এলাকার ৫ নম্বর সেক্টরের ৭ নং রোডে ছয়তলা ভবন, গুলশানের সুবাস্তু নজর ভ্যালিতে ৩ হাজার ৭২৫ ও ৫৮৫ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ও ২টি কার পার্কিং, দক্ষিণ কল্যাণপুরের ১ নম্বরে রোডে ১ হাজার ৫৮৩ বর্গফুট ফ্ল্যাট, উত্তরার ১৫সি রোডের ৩ কাঠার দুটি প্লট, টঙ্গী শিল্প এলাকায় ২ বিঘা জমি ও ভবন এবং রংপুরের বুড়িহাট রোডে কয়েক কোটি টাকায় নিজ বাড়ি।

এছাড়া একোয়া কালচার ফার্মস লিমিটেড, জিএমজি এয়ারলাইনস, নর্থ চিকস প্রাইভেট লিমিটেড, ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল, কছিল উদ্দিন মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, বায়ো মেডিকেল মার্চেন্ডাইজ প্রাইভেট লিমিটেড ও আই-পাইওনিয়ার হিটাচি প্রাইভেট মেডিকেলে শত কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে শেয়ারবাজারে শত কোটি টাকার বিনিয়োগ, ব্যক্তিগত দুটি গাড়ি, সাউথইস্টসহ বিভিন্ন ব্যাংকে শত কোটি টাকার সম্পদ থাকার তথ্য রয়েছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।

স্বাস্থ্য খাতে সব ধরনের টেন্ডার ও কেনাকাটায় একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল মিঠুর। যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশেও বিপুল সম্পদ রয়েছে তার। তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের একটি অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। ২০২০ সালের ৬ আগস্ট মাস্ক-পিপিই ক্রয় দুর্নীতির অনুসন্ধানে মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুকে তলব করা হলেও অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে হাজির হননি তিনি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০