নিজস্ব প্রতিবেদক: সর্বোচ্চ করপোরেট কর প্রদান করে সিগারেট খাত। করপোরেট করের সঙ্গে দুই শতাংশ সারচার্জ প্রদান করতে হয়। এ সারচার্জকে করপোরেট করের বাইরে অতিরিক্ত করের বোঝা ও বৈদেশিক বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে এমন কারণ দেখিয়ে তা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ সিগারেট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ)। একই সঙ্গে উচ্চ বা দামি সিগারেটের বিক্রি বাড়াতে নিম্ন ও মধ্যম ব্র্যান্ডের সিগারেটে কর বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে এনবিআরের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সভাপতিত্ব করেন। উল্লেখ্য, তামাক দ্রব্যে ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা ও তামাকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে কোম্পানিগুলোর মুনাফার ওপর দুই শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপ করে সরকার। গত দুবছরে এ খাতে হাজার কোটি টাকার বেশি তহবিল সংগ্রহ করা হলেও তা ব্যয় হয়নি।
বিসিএমএ সভাপতি ও ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের (বিএটিবি) চেয়ারম্যান গোলাম মাঈনুদ্দিন বলেন, সিগারেট খাতে সব সময় উচ্চ কর রয়েছে। বাংলাদেশে তামাকের কর ৮০ শতাংশ, যা পৃথিবীর অন্য সব দেশের চেয়ে বেশি। অন্য দেশে ৭৫ শতাংশের বেশি নেই। তামাক কোম্পানিগুলোকে সম্পূরক শুল্ক ও মূসক ৪৫ শতাংশ হারে করপোরেট কর পরিশোধ করতে হয়। এতে তামাক কোম্পানিগুলোর মুনাফা নগণ্য পর্যায়ে নেমে আসে। এর বাইরে নতুন করে দুই শতাংশ হারে সারচার্জ প্রদান এ খাতের জন্য বোঝা ও কষ্টকর। সারচার্জসহ ৪৭ শতাংশ হারে কর বিদেশি বিনিয়োগে প্রভাব ফেলবে। এ সারচার্জ প্রত্যাহার জরুরি।
সিগারেটের ওপর উচ্চ করারোপের ফলে চোরাচালান বেড়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কয়েক বছরে সিগারেটের প্রবৃদ্ধি আটকে আছে। এ খাতে বেশি করারোপের কারণে চোরাচালান বেড়েছে। উচ্চ ব্র্যান্ডের সিগারেটে বেশি করারোপের কারণে মানুষ নিম্ন ব্র্যান্ডে আসক্ত হচ্ছে। ফলে স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকি বাড়ছে। রাজস্ব আহরণ বাড়িয়ে এ খাতে যেন একটি সহনীয় নীতিমালা প্রণয়ন করা যায় এনবিআরকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সিগারেটে কর এমন হারে বাড়ানো যাবে না যেন চোরাচালান উৎসাহিত হয়। মিয়ানমার, ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে সিগারেট আসছে। সিগারেটের কাঁচামাল সব সময় পাওয়া যায় না। ৯ মাস আগে কৃষক থেকে কিনতে হয়। স্টোরে রেখে ৯ মাসে সুদসহ পরিশোধ করতে হয়। সিগারেটের মতো এত স্বচ্ছ রাজস্ব আদায় অন্য কোনো খাতে তেমন পাওয়া যায় না।
বিএটিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেহজাদ মুনিম বলেন, ২০০৬ সালের পর থেকে উচ্চস্তরের সিগারেটে কর বাড়ানো হলেও নি¤œস্তরের সিগারেটে কমানো হয়েছে। ফলে গত কয়েক বছরে এনবিআর অন্তত ছয় হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে। উচ্চস্তরের সিগারেটের বিক্রি কমে গেছে। সেজন্য তিনি উচ্চস্তরের সিগারেটের বিক্রি বাড়াতে নি¤œস্তরের সিগারেটের কর বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।
ঢাকা টোব্যাকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ বশির উদ্দিন বলেন, পাঁচ বছর ধরে সিগারেট খাতে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়নি। উচ্চস্তরে কর বেশি হওয়ায় চোরাচালান বেড়েছে। পাশাপাশি ব্যাগেজ রুলের আওতায় প্রচুর সিগারেট দেশে আসছে। এ সুযোগ বন্ধ ও নি¤œস্তরের সিগারেটের কর বাড়ানো উচিত।
ঢাকা টোব্যাকোর চেয়ারম্যান বলেন, সবাই নি¤œস্তরের সিগারেটের কর বাড়ানোর কথা বলছেন। তাহলে সিগারেট সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে পারে। আমরা অস্বীকার করতে পারি না, সিগারেট থেকে আমাদের বড় একটা রাজস্ব আসে। সিগারেটকে আমরা সুবিধা দিচ্ছি না, এর ওপর উচ্চ কর রয়েছে। পৃথিবীর অন্য দেশের তুলনায় এ দেশে কর অনেক উচ্চ। এরপরও সিগারেট বিক্রি হচ্ছে; কারণ সারা বিশ্বেই সিগারেট আছে। আমাদের দেশে সিগারেট উৎপাদন বন্ধ করে দিলেও চোরাচালানে সিগারেট আসবে। চোরাচালান বন্ধ করা কঠিন। অনেকেই বিদেশ থেকে সিগারেট নিয়ে আসেন, সেটা বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে। বাজেটে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিড়ি, তামাক, জর্দা, গুল স্বাস্থ্যের জন্য বেশি ক্ষতিকর বলে বাজেটে উচ্চ হারে কর বসানো হবে।
বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম বাংলাদেশে মুদ্রণ সম্ভবÑএমন মুদ্রিত সামগ্রীর আমদানি নিরুৎসাহিত করার জন্য কাগজ ও ফিনিশ্ড প্রোডাক্টের আমদানি শুল্কে বৈষম্য দূর, বন্ডেড সুবিধার আওতায় যেসব কাগজ, বোর্ড ও কালি আমদানি হয়Ñতা অবৈধভাবে যাতে খোলাবাজারে আসতে না পারে, তার ব্যবস্থা গ্রহণ, এ শিল্পকে প্যাকেজ ভ্যাটের আওতায় আনা, মণ্ডের মতো একই শুল্কে কাগজ আমদানির সুযোগ দেওয়ার সুপারিশ করেন।