স্বাস্থ্য খাতের নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়িত হোক

মহামারি কভিড সংক্রমণ শুরুর পর তা মোকাবিলার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, ব্যর্থতা, অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র অনেক বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দায়িত্বহীনতার কিছু নমুনা এককথায় বিস্ময়কর। যেমন, রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজি কভিড মহামারিকালে স্বাস্থ্যসেবা খাতের ভেঙে পড়ায় চিকিৎসাব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ভীষণভাবে কমেছে। বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশের প্রতিটি জেলা সদর হাসপাতালে ১০টি করে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও কিডনি ডায়ালাইসিসের শয্যা থাকবে। 

কিডনি ডায়ালাইসিস ব্যয়বহুল। ডায়ালাইসিস করার মতো প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা করার কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এটি স্বাস্থ্যসেবায় বড় অবদান রাখবে বলে আমরা আশা করি। একই দিন সংসদে ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ বিল, ২০২২’ উত্থাপন করা হয়েছে। এতে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত হবে ১: ১০ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কোনো বিভাগের খন্ডকালীন শিক্ষকের সংখ্যা সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমোদিত পদের ২৫ শতাংশের বেশি রাখা যাবে না। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ নির্মাণের জমি সংশ্লিষ্ট কলেজের নামে নিরঙ্কুশ, নিষ্কণ্টক, অখন্ড ও দায়মুক্ত হতে হবে। মেডিকেল কলেজ বা ডেন্টাল কলেজ এবং এর অধীন পরিচালিত হাসপাতাল কোনোভাবে ইজারা বা ভাড়া নেয়া জমিতে বা ভবনে নির্মাণ করা যাবে না।

চিকিৎসাপ্রাপ্তি মানুষের মৌলিক অধিকার। বেসরকারি খাতে প্রতিষ্ঠিত মেডিকেল কলেজ-হাসপাতালও কাগজে-কলমে সেবার ব্রত নিয়েই কার্যক্রম পরিচালনা করে। কিন্তু হাসপাতালের বাস্তব চিত্র ভিন্ন।

বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ বিল পাস হলে এবং তা যথারীতি পরিপালিত হলে তা স্বাস্থ্যসেবায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবই পরিগণিত হবে। অনিয়ম-অব্যস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে যে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে, সংশ্লিষ্টরা আন্তরিক ও দায়িত্ববান হলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে, আস্থার সংকট থাকবে না। ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু, মৃত ব্যক্তিকে ভেন্টিলেশনে রেখে রোগীর স্বজনদের থেকে বাড়তি অর্থ আদায়, হাসপাতালের বিল পরিশোধ না করায় মরদেহ হস্তান্তর না করার মতো অমানবিক অভিযোগ দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে হরহামেশাই দেখা যায়। আর ২০২০ সালে কভিড শনাক্ত হওয়ার পর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থার ভয়ংকর রূপ প্রত্যক্ষ করেছেন দেশবাসী। হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মুমূর্ষু অনেক রোগীকে ভর্তি করাতে ব্যর্থ হয়েছেন রোগীর স্বজনরা। এতে অনেকের মৃত্যু হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সে, অনেকের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালের করিডোরে।

বৈশ্বিক মহামারি কভিডে প্রাণ হারিয়েছেন দেশের শতাধিক চিকিৎসক। চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট অন্য কর্মীরাও প্রাণ হারিয়েছেন। এখনও চরম ঝুঁকি নিয়ে অনেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী মানুষের সেবা করে চলেছেন। দুচারজনের দায় পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিতে পারে না। আমরা চাই চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা এ ধরনের অনিয়মে জড়িতদের প্রশ্রয় দেবেন না। রাষ্ট্র শূন্যসহনশীলতায় ব্যবস্থা নিলে সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালেই সেবাগ্রহীতা বিশেষ করে রোগীদের সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০