স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নথি চুরি গ্রহণযোগ্য নয়

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নথি চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার ও কারাবরণ করতে হয় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে। গ্রেপ্তার ও কারাবরণ আইনি বিষয়। কিন্তু গ্রেপ্তারের আগে হেনস্তার শিকার হয়েছেন সাংবাদিক। বলা হয়ে থাকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি-সংক্রান্ত তার কয়েকটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়কে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছিল। ফলে বিরাগভাজন কর্মকর্তাদের কড়া ‘নজরদারিতে’ ছিলেন তিনি। সাংবাদিক জামিনে ছাড়া পেলেও বর্তমানে বিষয়টি বিচারাধীন। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করা সমীচীন নয়। প্রত্যাশিত ছিল, ওই ঘটনার পর নথি সংরক্ষণে সংশ্লিষ্টরা সতর্ক ও যতœবান হবেন। কিন্তু তা হয়নি। গতকাল শেয়ার বিজসহ গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের ১৭ নথি গায়েব হওয়া নিয়ে।

খবরে বলা হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ থেকে ১৭টি নথি খোয়া নিয়ে বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে মন্ত্রণালয়। জিডিতে বলা হয়, বুধবার অফিস সময়ে নথিগুলো ফাইল কেবিনেটে রাখা হয়। পরদিন দুপুর ১২টায় কাজ করতে গিয়ে দেখা যায়, ফাইলগুলো কেবিনেটে নেই।

সচিবালয়ে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। অভ্যন্তরে প্রবেশের কয়েকটি স্তর পার হতে হয়। একপ্রকার নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। যে কারও গতিবিধি সার্বক্ষণিক নজরদারির আওতায়। নথিও টেবিলের ওপর খোলামেলা রাখার জিনিস নয়। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের (উন্নয়ন) কক্ষের লাগোয়া ঘরে দর্শনাথী প্রবেশ করার কথা নয়। অথচ সেখান থকেই নথিগুলো ‘হারিয়ে’ গেছে। ১৭টি ফাইল একসঙ্গে হারিয়ে যাওয়া রহস্যজনক। তবে নথিগুলো হারিয়ে যাক, তা কারও কাম্য ছিল? টেবিলের ওপর থেকে নয়, নথিগুলো উধাও হয়েছে কেবিনেট থেকে। এতে প্রতীয়মান হয়, ‘বেড়ায় ক্ষেত খেয়েছে।’ তা ছাড়া নথিগুলোকে ‘গুরুত্বহীন’ বলা যায় না। সেগুলোর বেশিরভাগই স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের অধীন বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিভাগের কেনাকাটা সম্পর্কিত। মন্ত্রণালয়ের করা জিডিতে ১৭টি নথির নম্বর ও বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য হলো শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজসহ অন্যান্য মেডিকেল কলেজের কেনাকাটা-সংক্রান্ত একাধিক নথি, ইলেকট্রনিক ডেটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচি, নিপোর্ট অধিদপ্তরের কেনাকাটা, ট্রেনিং স্কুলের যানবাহন বরাদ্দ ও ক্রয়সংক্রান্ত নথি। রয়েছে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক প্রকল্পের নথি।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পর্দাকাণ্ডের কথা আমাদের মনে আছে। যেমন, পর্দার দাম ৩৭ লাখ, অক্সিজেন জেনারেটরের দাম ৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এত দাম দিয়ে কেনা হলেও পর্দার ব্যবহার হয়নি বছরের পর বছর। একইভাবে অভাবনীয় দাম দেখিয়ে কেনা বেশিরভাগ যন্ত্রই ফেলে রাখা হয়েছে।

আমরা মনে করি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নথি গায়েবের ঘটনা কোনো অনুসন্ধানী সাংবাদিকের কাজ নয়। যারা মনে করে ‘অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ থাকে’ হয়তো তারা অপকর্ম চাপা দিতে এমন কাøে জড়িত থাকবে। যারাই জড়িত থাকুক, তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। ফাইল গায়েবের ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্তে যা-ই উঠে আসুক, তা জনস্বার্থে প্রকাশ করতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০