Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 10:32 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম বিখ্যাত কবি ও সমাজকর্মী কামিনী রায়। তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের প্রথম মহিলা স্নাতক ডিগ্রিধারী ব্যক্তিত্ব। ‘জনৈক বঙ্গমহিলা’ ছদ্মনামে তিনি তার সাহিত্য রচনা শুরু করেন। তার উল্লেখযোগ্য রচনা নির্মাল্য, পৌরানিকী, গুঞ্জন, মাল্য ও নির্মাল্য (১৯১৩), সনেট সংগ্রহ, অশোক-সঙ্গীত, নাট্যকাব্য অম্বা, ঠাকুরমার চিঠি, দ্বীপ ও ধূপ (১৯২৯) এবং জীবন পথে। কামিনী রায় ১৮৬৪ সালের ১১ অক্টোবর তৎকালিন বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জের বাসন্ডা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৮০ সালে তিনি কলকাতা বেথুন স্কুল থেকে এন্ট্রান্স  পরীক্ষা ও ১৮৮৩ সালে এফ.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে ১৮৮৬ সালে তিনি বেথুন কলেজ থেকে ভারতের প্রথম নারী হিসেবে সংস্কৃত ভাষায় সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর ১৮৮৬ সালেই তিনি বেথুন কলেজের স্কুল বিভাগে শিক্ষিকার পদে নিযুক্ত হন। দীর্ঘদিন তিনি এই কলেজে অধ্যাপনা করেন। কামিনী রায় ১৯২২-২৩ পর্যন্ত তিনি নারী শ্রমিক তদন্ত কমিশনের অন্যতম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মাত্র ৮ বছর বয়সে তিনি প্রথম কবিতা রচনা করেন। তার রচিত কবিতায় জীবনের সুখ-দুঃখ, আশা-আকাক্সক্ষা, আনন্দ-বেদনার সহজ-সরল ও সাবলীল প্রকাশ ঘটেছে। কাব্যগ্রন্থ ‘আলো ও ছায়া’ (১৮৮৯) প্রকাশিত হলে তার কবিখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তার দুটি প্রসিদ্ধ দীর্ঘ কবিতা অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত ‘মহাশ্বেতা’ ও ‘পুন্ডরীক’। ১৯০৫ সালে তিনি শিশুদের জন্য গুঞ্জন নামের কবিতা সংগ্রহ ও প্রবন্ধ গ্রন্থ বালিকা শিক্ষার আদর্শ রচনা করেন। সাহিত্যচর্চার পাশাপশি তিনি সাংস্কৃতিক ও জনহিতকর, বিশেষত নারী কল্যাণমূলক কাজেও আত্মনিয়োগ করেন। লিখেছেন সব অসংগতির বিরুদ্ধে ও নারী জাগরণের পক্ষে। নারীর ভোটাধিকার আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন তিনি। তাদের সেই আন্দোলনের ফলেই তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ১৯২৬ সালে বাঙালি নারীর ভোটাধিকার প্রদান করে। তিনি নারীশ্রমিক তদন্ত কমিশনের অন্যতম সদস্য (১৯২২-২৩), বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনে সাহিত্য শাখার সভানেত্রী (১৯৩০) এবং বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি ছিলেন। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগত্তারিণী স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৩৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা