খ্যাতনামা রবীন্দ্র বিশারদ পুলিনবিহারী সেনের ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট অবিভক্ত বাংলার অধুনা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার ব্রাহ্মপল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন। সেদিন মুজফ্ফরপুরের জেলে বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসি হয়। তাই পরিবারে তার ডাকনাম ছিল ‘খুদু’ বা ‘খুদি’। তার পড়াশোনা ময়মনসিংহের জাতীয় বিদ্যালয়ে শুরু হয়। ১৯২৫ সালে তিনি শান্তিনিকেতনের আশ্রম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিশ্বভারতীর শিক্ষা ভবনে ভর্তি হন। তিনি বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষণ শুনতেন নিবিষ্ট মনে। একদিন স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে তিনি সেই ভাষণ খাতায় লিখতে শুরু করেন। পরপর কয়েকটি ভাষণ লিপিবদ্ধ করার পর তিনি কবিকে দেখান। রবীন্দ্রনাথ পড়ে দেখার পর তাকে বলেছিলেন, ‘চমৎকার লিখেছিস তো! তোর বাংলা জ্ঞান বেশ ভালো।’ অচিরেই তিনি কবির স্নেহ লাভ করেন। পুলিনবিহারী শান্তিনিকেতন থেকে আইএ, স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বিএ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ পাস করেন। ১৯৩৫ সালে প্রবাসী পত্রিকায় তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৩৯ সালে যোগ দেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থন বিভাগে। বিস্মৃতপ্রায় রবীন্দ্র-রচনার সূচি ও সংকলন তার জীবনের উল্লেখযোগ্য অবদান। রবীন্দ্ররচনা, রবীন্দ্রজীবন ও বিস্তৃত কর্মের তথ্যনিষ্ঠ পরিচয় লিপিবদ্ধকরণ, আকর, পাণ্ডুলিপি, চিঠিপত্র, সমকালীন পত্রপত্রিকা সংগ্রহ ও সংরক্ষণে তার আজীবন নিরলস সাধনা ছিল। তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে রবীন্দ্রচর্চা ও গবেষণায় অনন্য দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। তার চেষ্টায় রবীন্দ্র গবেষণা, সংকলন, সম্পাদনা, মুদ্রণ ও পুস্তকাকারে প্রকাশের বিষয়গুলো নতুন মাত্রা পেয়েছে। রবীন্দ্রজীবন ও সাহিত্যের ভাণ্ডার হিসেবেও তাকে অভিহিত করা হয়। পুলিনবিহারী সেন ১৯৫৭ সালে বিশ্বভারতীর গ্রন্থন বিভাগের অধ্যক্ষ হন। তিনি ১৯৬০ সালে বিশ্বভারতী থেকে পদত্যাগ করেন। তবে ‘রবীন্দ্রচর্চা প্রকল্প’র অধ্যক্ষ হিসেবে আবার ১৯৬৭ সালে যোগ দেন। পুলিনবিহারী সেন বিভিন্ন সময়ে নানা পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তিনি ১৯৮৪ সালের ১৪ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা