মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর। তার বাবা সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যুর পর ১৫৫৬ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে আকবর ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেন। একজন বিজয়ী বীর, প্রশাসক ও শিল্প-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সম্রাট আকবর এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন। তিনি ‘মহামতি আকবর’ নামেও পরিচিত। প্রায় ৩৫০ বছরের মুঘল ইতিহাসে আকবরই শাসন করেছেন প্রায় ৫৩ বছর। সম্রাট জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর ১৫৪২ সালের ২৩ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নিজে নিরক্ষর হলেও অসম্ভব তীক্ষè স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছিলেন। শিক্ষিত ও জ্ঞানী-গুণীদের বেশ সমাদর করতেন। তার সভাকে অলংকৃত করেন ইতিহাসবিখ্যাত নবরত্ন। সম্রাট আকবর বৈরাম খানের তত্ত্ববধানে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্রাজ্য বিস্তার করতে থাকেন। ১৫৬০ সালে বৈরাম খাঁকে সরিয়ে আকবর নিজেই সব ক্ষমতা দখল করেন। আকবর ভারতবর্ষ ও আফগানিস্তানে তার সাম্রাজ্য বিস্তার চালিয়ে যান। ১৬০৫ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় গোটা উত্তর ভারত তার সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে। আকবরের মৃত্যুর পর তার ছেলে সম্রাট জাহাঙ্গীর ভারতবর্ষের শাসনভার গ্রহণ করেন। সম্রাট আকবর ছিলেন একজন বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন সামরিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। সুপরিকল্পিতভাবে রাজ্য ব্যবস্থাকে পরিচালনা করে সম্রাট আকবর দূরদর্শিতার প্রমাণ রাখেন। তিনি মুঘল সাম্রাজ্যে একটি পরিপূর্ণ শাসননীতি প্রবর্তন করে যান, যা আওরঙ্গজেব পর্যন্ত টিকে ছিল। তার রাজত্বকালে শিল্প ও স্থাপত্যের বিশেষ অগ্রগতি সাধিত হয়। তিনি ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সম্রাট আকবর শৌর্যবীর্যপূর্ণ অসীম সাহসী শাসক ছিলেন। ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা পঞ্জিকা প্রবর্তন করেন। তার শাসনকালে ধর্ম, সংস্কৃতি, দর্শন ও সাহিত্যের পাশাপাশি নানা বিষয় অত্যন্ত গুরুত্ব লাভ করে। তিনি সব ধর্মের সমন্বয় করে দ্বিন-ই-ইলাহি নামে নতুন ধর্মের প্রবর্তন করেন। ১৬০৫ সালের ১৫ অক্টোবর সম্রাট আকবরের মৃত্যু হয়। ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রার শহরতলি সিকান্দ্রাতে ১১৯ একর জমির ওপর স্থাপিত সমাধিসৌধটি মুঘল স্থাপত্যের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।
কাজী সালমা সুলতানা