স্মরণীয়-বরণীয়

দ্রোহ, প্রেম ও প্রতিবাদী রোমান্টিক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। সাহস ও স্বপ্নে, শিল্প ও সংগ্রামে সমর্পিত এই কবি তার স্বল্পায়ুকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তারুণ্যের দীপ্র সড়কে। ‘জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন’ এই নির্মম সত্য অবলোকনের পাশাপাশি তিনি উচ্চারণ করেছেন, ‘ভুল মানুষের কাছে নতজানু নই।’ অসাম্য, শোষণ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে অনমনীয় অবস্থান তাকে পরিণত করেছে তারুণ্যের বিপ্লবী প্রতীকে। আশির দশকে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠে যে কজন কবি শ্রোতাদের প্রিয় হয়ে ওঠেন, কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তাদের মধ্যে অন্যমত। তিনি ১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর বাবার কর্মস্থল বরিশালে জš§গ্রহণ করেন। তাদের স্থায়ী নিবাস বাগেরহাট জেলার মংলা থানার অন্তর্গত সাহেবের মেঠ গ্রামে। তিনি ঢাকা ওয়েস্ট অ্যান্ড হাইস্কুল থেকে ১৯৭৪ সালে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৭৬ সালে এইচএসসি পাস করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে তিনি সম্মানসহ বিএ এবং ১৯৮৩ সালে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তার রচিত ‘বাতাসে লাশের গন্ধ’ কবিতা আশির দশকে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। তিনি সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ‘সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট’ ও ‘জাতীয় কবিতা পরিষদ’ গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা এবং জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৫-পরবর্তী সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ, দেশাত্মবোধ, গণআন্দোলন, ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতা তার কবিতায় বলিষ্ঠভাবে উপস্থিত। কবিতা ছাড়াও তিনি গীতিকার হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন। রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য ও ‘ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি দিও’সহ অর্ধশতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য রচনা উপদ্রুত উপকূল, ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম, মানুষের মানচিত্র, ছোবল, গল্প, দিয়েছিলে সকল আকাশ, মৌলিক মুখোশ; ছোটগল্প সোনালি শিশির; নাট্যকাব্য বিষ বিরিক্ষের বীজ এবং বড়গল্প মনুষ্যজীবন। ১৯৯১ সালের ২১ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০