স্মরণীয়-বরণীয়

‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়

হয়তো মানুষ নয়, হয়তো-বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে।’

‘রূপসী বাংলা’ কাব্যে ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ দেশের প্রতি ভালোবাসা এভাবেই ব্যক্ত করেছেন। তার রূপসী বাংলা কবিতা ষাটের দশকে বাঙালির জাতিসত্তা বিকাশের আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংগ্রামী বাঙালিকে তীব্রভাবে অনুপ্রাণিত করে। কবি ও শিক্ষাবিদ জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ‘ব্রহ্মবাদী’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। জীবনানন্দের মা কুসুমকুমারী দাশও কবিতা লিখতেন। তার সুপরিচিত কবিতা ‘আদর্শ ছেলে’ (আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে)। জীবনানন্দ দাশ বরিশাল ব্রজমোহন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক (১৯১৫), বিএম কলেজ থেকে আইএ (১৯১৭) এবং কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ (১৯১৯) ও ইংরেজিতে এমএ (১৯২১) পাস করেন। আইন কলেজে ভর্তি হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি পরীক্ষা দেননি। ১৯২২ সালে তিনি কলকাতা সিটি কলেজে ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যাপনা শুরু করেন। তার কর্মজীবন বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনা এবং মাঝেমধ্যে অন্য পেশায় অতিবাহিত হয়। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরাপালক’ প্রকাশিত হয় ১৯২৭ সালে। তার রচিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থÑধূসর পাণ্ডুলিপি, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, সাতটি তারার তিমির, রূপসী বাংলা, বেলা অবেলা কালবেলা প্রভৃতি। তিনি ২১টি উপন্যাস ও ১২৬টি ছোটগল্প রচনা করেন। উপন্যাসের মধ্যে মাল্যবান, সুতীর্থ, জলপাইহাটি, জীবনপ্রণালী, বাসমতীর উপাখ্যান প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তিনি দুই শতাধিক গল্পও লিখেছেন। এছাড়া তিনি বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা ও প্রকাশ করেন। তার প্রথম কাব্যে নজরুল ইসলামের প্রভাব থাকলেও দ্বিতীয় কাব্য থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন মৌলিক ও ভিন্ন পথের অনুসন্ধানী। বুদ্ধদেব বসু তাকে ‘নির্জনতম কবি’ এবং অন্নদাশঙ্কর রায় তাকে ‘শুদ্ধতম কবি’ অভিধায় আখ্যায়িত করেছেন। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দের ‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থ নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনে এবং শ্রেষ্ঠ কবিতা গ্রন্থটি ভারতের সাহিত্য আকাদেমিতে পুরস্কৃত হয়। ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০