অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী রাজনীতিবিদ ও জননেতা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক। রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষের কাছে শেরে বাংলা (বাংলার বাঘ) এবং ‘হক সাহেব’ নামে পরিচিত। তিনি কলকাতার মেয়র (১৯৩৫), অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী (১৯৩৭-১৯৪৩) এবং পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী (১৯৫৪), পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (১৯৫৫) এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের পদসহ (১৯৫৬-১৯৫৮) বহু উঁচু রাজনৈতিক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। যুক্তফ্রন্ট গঠনে প্রধান নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। আবুল কাশেম ফজলুল হক ১৮৭৩ সালের এই দিনে বরিশাল (বর্তমানে ঝালকাঠি) জেলার রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৯০ সালে ফজলুল হক বরিশাল জিলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, ১৮৯২ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফএ এবং ১৮৯৪ সালে বিএ পরীক্ষায় (রসায়ন, গণিত ও পদার্থবিদ্যা তিনটি বিষয়ে অনার্সসহ) উত্তীর্ণ হন। ১৮৯৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি গণিত শাস্ত্রে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৯৭ সালে বিএল ডিগ্রি পাস করে তিনি স্যার আশুতোষ মুখার্জীর অধীনে শিক্ষানবিস হিসেবে আইন ব্যবসা শুরু করেন। ফজলুল হক ১৯১২ সালে মুসলিম লীগে ও ১৯১৪ সালে নিখিল ভারত কংগ্রেস দলে যোগ দেন। ১৯১৩ ও ১৯১৫ সালে তিনি বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। একই সঙ্গে মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস দলের নেতা হয়ে উঠেন। ১৯২০ সালে তিনি কাজী নজরুল ইসলাম ও মুজাফ্ফর আহমদের সঙ্গে মিলে নবযুগ নামে একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। প্রায় অর্ধশতক ধরে এ কে ফজলুল হক ছিলেন উপমহাদেশের এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি এ অঞ্চলের মানুষের শিক্ষা, রাজনীতি, সমাজ সংস্কার প্রভৃতি ক্ষেত্রে উজ্জ্বল ভূমিকা রাখেন। ‘ঋণ সালিসি বোর্ড’ গঠন করে তিনি দরিদ্র চাষিদের সুদখোর মহাজনের কবল থেকে রক্ষা করেন। ফজলুল হক ইংরেজি, বাংলা ও উর্দুতে অনর্গল বক্তৃতা করতে পারতেন। বাংলার পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের জন্য তিনি অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক এবং হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের প্রতীক। ১৯৬২ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা