ভাষাসৈনিক, আইনজীবী, সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ১৩৫তম জন্মদিন আজ। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের একজন পথপ্রদর্শক হিসেবে তিনি বাঙালির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ১৮৮৬ সালের ২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের উত্তরে রামরাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯০৮ সালে কলকাতার রিপন কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯১০ সালে একই কলেজ থেকে বিএল পরীক্ষা পাস করেন। এরপর প্রথমে তিনি শিক্ষকতা পেশায় ও পরে ১৯১১ সালে আইন ব্যবসায় যুক্ত হন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ১৯১৫ সালের ভয়াবহ বন্যার সময় এবং ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময় ত্রাণসামগ্রী বিতরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৩৬ সালে তিনি ত্রিপুরা (বর্তমানে কুমিল্লা) জেলা বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯১৯ সালে তিনি ময়মনসিংহ শহরে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় প্রদেশিক কংগ্রেসের সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়ার মাধ্যমে তিনি রাজনীতিতে যোগদান করেন। তিনি বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন ও ভারত ছাড় আন্দোলনে যোগ দেন। ব্রিটিশবিরোধী কার্যকলাপের জন্য তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হন। কারাগারে কখনও বিনাশ্রম আবার কখনও সশ্রম দণ্ড ভোগ করেন। অবিভক্ত ভারত ও পাকিস্তানে একাধিকবার আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। পূর্ব পাকিস্তানের মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য হিসেবে তিনি শাসনতন্ত্র প্রণয়নসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৮ সালের ২৫ আগস্ট পাকিস্তান গণপরিষদে তিনি অধিবেশনের সব কার্যবিবরণী ইংরেজি ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলাও অন্তর্ভুক্ত রাখার দাবি উত্থাপন করেন। ১৯৬০ সালের পাকিস্তানের সামরিক শাসক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ওপর ‘এবডো’ প্রয়োগ করে। ১৯৬৫ সালে তাকে গৃহবন্দি করা হলে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাকে ছেলেসহ গ্রেপ্তার করে ময়নামতি সেনানিবাসে নেয় এবং সেখানে তাদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭ সালে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদানের জন্য তাকে ‘ভাষা ও স্বাধীনতা আন্দোলনে স্বাধীনতা পুরস্কার’ প্রদান করে।
কাজী সালমা সুলতানা