বিশ শতকের প্রগতিশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ। তিনি বাঙালি আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ এবং স্বরাজ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা। উদার মনোভাব, হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে মানুষের প্রতি তার দরদি মনোভাবের কারণে তিনি জনসাধারণের কাছে ‘দেশবন্ধু’ নামে পরিচিত ছিলেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ১৮৭০ সালের ৫ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ববঙ্গের মুন্সীগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হন। তিনি ১৮৯৩ সালে ব্যারিস্টারি পড়া শেষ করে দেশে ফিরে আইন পেশায় কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯০৩ সালে কলকাতায় প্রমথ মিত্র ও চিত্তরঞ্জন দাস বিপ্লবী সংগঠন ‘অনুশীলন সমিতি’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৬ সালে তিনি যোগদান করেন নাগপুর কংগ্রেসে। গান্ধীর আহ্বানে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে তিনি আইন পেশা ত্যাগ করেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের কারণে ব্রিটিশ সরকার তাকে অনেকবার কারাগারে অন্তরীণ করে। রাজনীতির মধ্যে থেকেও তিনি নিয়মিত সাহিত্যচর্চা করতেন। সে সময়কার বিখ্যাত মাসিক পত্রিকা ‘নারায়ণ’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ছিলেন তিনি। ‘মালঞ্চ’, ‘সাগর সংগীত’ ও ‘অন্তর্যামী’ গ্রন্থের জন্য তিনি কবি ও লেখক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। চিত্তরঞ্জন দাশ বুঝতে পারেন বাংলাকে অখণ্ড রেখে শান্তিপূর্ণভাবে জীবন-যাপন করতে হলে হিন্দু-মুসলমানের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতার প্রয়োজন, প্রয়োজন একটি স্বাধীন ভুখণ্ডের। তাই ১৯২৩ সালে সিরাজগঞ্জে প্রাদেশিক সম্মেলনে তিনি তার বিখ্যাত হিন্দু-মুসলিম চুক্তি (বেঙ্গল প্যাক্ট) সম্পাদন করেন। ১৯২৪ সালে তিনি প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। ১৯২৩ সালে তিনি স্বরাজ্য দলের মুখপাত্র হিসেবে সাপ্তাহিকী ‘দ্য ফরওয়ার্ড’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সবরকম ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যবদ্ধ রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে অবিচল থাকেন। তিনি নারী মুক্তি সমর্থন এবং নারীশিক্ষা ও বিধবাদের পুনর্বিবাহকে উৎসাহিত করতেন। ১৯২৫ সালে কংগ্রেসের অধিবেশন শেষে দার্জিলিং যাওয়ার পথে ১৬ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে বিশ্বকবি বরীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ/মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান।’
কাজী সালমা সুলতানা