বরেণ্য অভিনেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী যাকেরের ৭৭তম জš§দিন আজ। তিনি স্বাধীনতা-পরবর্তী মঞ্চনাটকের অন্যতম সংগঠক ও সফল নাট্যনির্দেশক ছিলেন। তিনি বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটির কর্ণধার ছিলেন। আলী যাকের ১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার রতনপুর ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে তার শৈশব কাটে ফেনী, খুলনা, কুষ্টিয়া ও ঢাকায়। তিনি ১৯৬০ সালে সেন্ট গ্রেগরিজ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক, নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৭২ সালে আলী যাকের আরণ্যক নাট্যদলের মাধ্যমে প্রথম মঞ্চনাটকের জগতে প্রবেশ করেন। তার অভিনীত প্রথম মঞ্চনাটক মুনীর চৌধুরীর কবর। পরবর্তী সময়ে তিনি নাগরিক নাট্যদলে যোগ দেন। আলী যাকের একাধারে মঞ্চনাটক, টেলিভিশন, বেতার নাটক ও চলচ্চিত্রেও অভিনয় করে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। অভিনয়ের পাশাপাশি নাটকে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। মৌলিক টিভি নাটক রচনার পাশাপাশি অনেক বিদেশি নাটক তিনি রূপান্তর করেছেন। শৌখিন ফটোগ্রাফার ছিলেন তিনি। ফটোগ্রাফিতে দক্ষতার কারণে তিনি যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফি সোসাইটির স্থায়ী সদস্যপদ পান। আলী যাকের সংস্কৃতি ও সমাজের নানা দিক নিয়ে একাধিক বই রচনা করেন। সমসাময়িক বিষয়ে পত্রপত্রিকায় প্রবন্ধ লিখতেন নিয়মিত। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি হয়ে কাজ করেছেন। তার অভিনীত মঞ্চনাটকের মধ্যে কবর, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ, দেওয়ান গাজীর কিস্সা, সৎ মানুষের খোঁজে, ম্যাকবেথ, নূরলদীনের সারাজীবন ও গ্যালিলিও উল্লেখযোগ্য। টিভি নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘বহুব্রীহি’ ও ‘আজ রবিবার’। এছাড়া নদীর নাম মধুমতী, লালসালুসহ চারটি চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন। তার সহধর্মিণী সারা যাকেরও একজন অভিনেত্রী। আলী যাকের একুশে পদক ছাড়াও শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদক এবং মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা লাভ করেন। ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা