অমর একুশের প্রথম কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’-এর রচয়িতা কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরীর ৯৪তম জš§বার্ষিকী আজ ৭ নভেম্বর। ভাষাসৈনিক মাহবুব উল আলম চৌধুরী ১৯২৭ সালের ৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৭ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে আইএ পড়ার সময় চট্টগ্রাম কলেজ ত্যাগ করার পর আর লেখাপড়া করেননি। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪২ সালে চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র কংগ্রেসে যোগদান করে ছাত্র কংগ্রেসের কর্মী হিসেবে ব্রিটিশবিরোধী, ভারত ছাড় আন্দোলনে তিনি অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৫ সালে ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। ১৯৪৬ সালে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের বীর বিপ্লবীরা কারামুক্ত হলে জে এম সেন হলে তার মামা আহমদ সাগীর চৌধুরীর নেতৃত্বে যে সংবর্ধনা সভা অনুষ্ঠিত হয়, তিনি ছিলেন এর উদ্যোগী কর্মী। ১৯৪৭ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রাম থেকে তিনি ‘সীমান্ত’ শিরোনামে প্রগতিশীল মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। এই পত্রিকায় ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে রাষ্ট্রভাষার ওপর প্রথম সম্পাদকীয় লেখা হয়। তিনি ১৯৪৯ সালের ২২ ও ২৩ নভেম্বর কলকাতার দেশবন্ধু পার্কে যে বিশ্বশান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, সেই সম্মেলনে যোগদান করেন। সম্মেলন শেষে বেরোনো মিছিল থেকে পুলিশ মাহবুব উল আলম চৌধুরীসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে এবং আলীপুর কারাগারে বন্দি করে। তিনদিন পর তাদের মুক্তি দেয়া হয়। ১৯৫২ সালে তিনি চট্টগ্রাম জেলা রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৫৩ সালে গণতন্ত্রী দল গঠিত হলে তিনি দলের চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সম্পাদক হন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। মাহবুব উল আলম চৌধুরী কবিতা, গল্প, নাটক ও প্রবন্ধ মিলে তিনি ২০টি গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি ১৯৮৬ সালে বাংলা একাডেমির ফেলোশিপ ও ২০০৯ সালে মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন। ২০০৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা
