ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ মৌলানা আবুল কালাম আজাদের আজ ১৩৩তম জন্মবার্ষিকী। তার প্রকৃত নাম সৈয়দ গুলাম মুহিউদ্দিন আহমেদ বিন খায়েরউদ্দিন আল হুসায়নি। তিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তিনি ইসলামি ধর্মশাস্ত্রে সুপণ্ডিত ছিলেন। মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ১৮৮৮ সালের ১১ নভেম্বর উসমানীয় সাম্রাজ্য বর্তমানের সৌদি আরবের মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার রক্ষণশীল হওয়ায় ছোটবেলায় বাড়িতে ধর্মীয় শিক্ষালাভের মাধ্যমে তার শিক্ষাগ্রহণ শুরু। পরে নিজ আগ্রহে তিনি আধুনিক দর্শন, বিজ্ঞান, সাহিত্য, ইংরেজিসহ নানা গ্রন্থ অধ্যয়ন করেন। তরুণ বয়সে তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির প্রবক্তা ছিলেন এবং দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভাগের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি সাংবাদিকতার পেশা গ্রহণ করে ব্রিটিশ শাসনের সমালোচনা করেন এবং ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে সমর্থন জানান। তিনি খিলাফত আন্দোলনে নেতৃত্ব দান করেন। তিনি ১৯১৯ সালের রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে মহাত্মা গান্ধীর অহিংস অসহযোগের ধারণায় অনুপ্রাণিত হয়ে অসহযোগ আন্দোলন সংগঠনে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯২৩ সালে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনিই ছিলেন কংগ্রেসের সর্বকনিষ্ঠ সভাপতি। ১৯৩১ সালে মৌলানা আজাদ ধারাসন সত্যাগ্রহ শুরু করেন। এসময় তিনি হয়ে ওঠেন দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক নেতা। তিনি ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণা এবং হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির কথা প্রচার করেন। ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের সময় পর্যন্ত পাঁচ বছর (১৯৪০-১৯৪৫) তিনি কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এই সময় তিন বছর তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন। ১৯৪৭ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় তিনি হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির জন্য প্রচেষ্টা চালান। স্বাধীন ভারতের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে তিনি বিনা মূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষার জন্য আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চালু করেন। তিনিই ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন স্থাপন করেন। ১৯৫৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি এই মানবতাবাদী রাজনীতিবিদ ও সমাজ সংস্কারক মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৯২ সালে তিনি ‘ভারতরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত হন।
কাজী সালমা সুলতানা