কবি, কথাসাহিত্যিক, অনুবাদক ও সাংবাদিক বেলাল চৌধুরীর আজ ৮৩তম জন্ম বার্ষিকী। ষাটের দশকের ‘হাংরি জেনারেশনের’ কবি বলা হয় তাকে। তিনি বাংলা সাহিত্যের বোহেমিয়ান কবি হিসেবেও পরিচিত। কবি বেলাল চৌধুরী ১৯৩৮ সালের ১২ নভেম্বর বর্তমান ফেনী জেলার সদর উপজেলার শর্শদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
ছাত্রাবস্থায় বেলাল চৌধুরী জড়িয়ে পড়েন বাম ধারার রাজনীতিতে। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারাগারেও যান। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরও তিনি পাকিস্তানি শাসকদের নানারকম নির্যাতনের মুখে পড়েন। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি কলকাতায় চলে যান। সেখানে বসবাসকালে সাহিত্য পত্রিকা কৃত্তিবাস সম্পাদনায় যুক্ত হন কবি। পরে পল্লীবার্তা, সচিত্র সন্ধানী ও ভারত বিচিত্রা পত্রিকার সম্পাদনায় যুক্ত হন। তিনি আনন্দবাজার পত্রিকা, অমৃত বাজার, যুগান্তর ও সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকাতেও লেখালেখি করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং যোগ দেন প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনে। সেসময় জাতীয় কবিতা পরিষদ ও পদাবলী কবিতা সংগঠন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
কবিতা, গদ্য, অনুবাদ, সম্পাদনা ও শিশুসাহিত্য মিলিয়ে বেলাল চৌধুরীর গ্রন্থসংখ্যা পঞ্চাশের বেশি। ‘বল্লাল সেন’, ‘ময়ূর বাহন’, ‘সবুক্তগীন’ ছদ্মনামেও তিনি লিখেছেন। তার কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে নিষাদ প্রদেশে, আত্মপ্রতিকৃতি, স্থির জীবন ও নিসর্গ, জলবিষুবের পূর্ণিমা, সেলাই করা ছায়া, যাবজ্জীবন সশস্ত্র উল্লাস, বত্রিশ নম্বর প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তার কথাসাহিত্য, প্রবন্ধ ও গবেষণা গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল, ডুমুরপাতার আবরণ, চেতনার রঙ চন্দ্রশিলা এবং লাকসাম দাদা ও অন্যান্য গল্প। মিশ্রচিত্রপট, জীবনের আশ্চর্য ফাল্গুন, সুন্দরবন, সোঁদরবন ও রবীন্দ্রনাথ প্রভৃতি তার গদ্যনির্ভর গ্রন্থ। শিশু-কিশোরদের জন্য তিনি লিখেছেন সাড়ে বত্রিশ ভাজা, সপ্তরতেœর কারকারখানা ও সবুজ ভাষার ছড়া। নিজে লেখার পাশাপাশি সম্পাদনা করেছেন বেশ কিছু স্মারকগ্রন্থ। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বেলাল চৌধুরী ২০১৪ সালে একুশের পদক লাভ করেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, নীহাররঞ্জন স্বর্ণপদক, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কারসহ নানা সম্মাননা লাভ করেন। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা