কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা, গীতিকার ও শিক্ষক হুমায়ূন আহমেদের আজ ৭৩তম জন্মবার্ষিকী। তিনি বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিকদের অন্যতম। আধুনিক বাংলা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পথিকৃৎ তিনি। হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার বাবা ফয়জুর রহমান পিরোজপুর মহকুমার এসডিপিও হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং কর্তব্যরত অবস্থায় পাকবাহিনীর হাতে শহীদ হন। ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী হুমায়ূূন আহমেদকেও ধরে নিয়ে কিছুদিন আটক করে রাখে এবং দৈহিক নির্যাতন করে। পারিবারিক পরিমণ্ডলে সাহিত্য-সংস্কৃতির পরিবেশে হুমায়ূূন আহমেদের শৈশব জীবন অতিবাহিত হয়। সিলেট জেলা শহরের কিশোরীমোহন পাঠশালায় তার শিক্ষাজীবনের সূচনা। ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে বিএসসি (সম্মান) এবং ১৯৭২ সালে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পলিমার রসায়ন বিষয়ে গবেষণা করে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ময়মনসিংহ) প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন। ১৯৯০ সালে তিনি অধ্যাপনা পেশা ছেড়ে সার্বক্ষণিক সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৭২ সালে ছাত্রজীবনে লেখা ‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাস রচনার মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যে হুমায়ূন আহমেদের পদচারণ শুরু হয়। তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা তিন শতাধিক। তার শেষ উপন্যাস ‘দেয়াল’। আশির দশকে তিনি বাংলাদেশের টেলিভিশনে নাটক ও ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করেন। তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং নিজের নাটক ও চলচ্চিত্রের জন্য গান রচনা করেছেন। সৃজনশীলতার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং একুশে পদক ছাড়াও বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন। বাংলাদেশের বাইরেও তিনি সম্মাননা পেয়েছেন। জাপান টেলিভিশন তাকে নিয়ে Who is who in Asia শিরোনামে ১৫ মিনিটের একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করে। তার বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তিনি ২০১২ সালের ১৯ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা
