মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহের বীরউত্তম ১৯৩৮ সালের ১৪ নভেম্বর আসামের বদরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার কাজলা গ্রামে। আবু তাহের ১৯৬০ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালে তিনি পাক-ভারত যুদ্ধে কাশ্মীর ও শিয়ালকোট রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেন। এ যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ কৃতিত্বের জন্য তিনি সামরিক খেতাব লাভ করেন। তাহের ১৯৬৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেরিলা যুদ্ধ ও উচ্চতর সমরবিদ্যায় সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তাহের রাজনৈতিক সচেতন ছিলেন এবং সেই উদ্দেশ্যকে ধারণ করেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। মহান মুক্তিযুদ্ধকালে তাহের তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে সামরিক দুর্গে আটক ছিলেন। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে সেখান থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেক্টর কমান্ডার হিসেবে তিনি অনেকগুলো প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশ নেন। ১৪ নভেম্বর জামালপুরের কামালপুরে পাকিস্তানি সৈন্যদের ঘাঁটিতে আক্রমণ করতে গিয়ে তিনি প্রচণ্ড প্রতিরোধের মুখে পড়েন। এ সময় তিনি রণাঙ্গনে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছিলেন। যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানিদের মর্টার শেলের আঘাতে তিনি বাম পা হারান। কর্নেল আবু তাহের মহান মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কৃতিত্বের জন্য রাষ্ট্রীয় সামরিক খেতাব ‘বীরউত্তম’ পদকে ভূষিত হন। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে তিনি ৪৪ পদাতিক ব্রিগেডের অধিনায়ক নিযুক্ত হন। স্বাধীন দেশের সেনাবাহিনীর গঠনকাঠামো নিয়ে মতভেদের কারণে তিনি স্বেচ্ছায় সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর কর্নেল তাহের জাসদ ও তার তত্ত্বাবধানে সেনাবাহিনীর মধ্যে গড়ে তোলা বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার সহযোগিতায় বিপ্লব সংঘটিত করার প্রচেষ্টা চালান। এ প্রচেষ্টার মাধ্যমে তৎকালীন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করেন। কিন্তু বিপ্লব ব্যর্থ হলে ২৪ নভেম্বর তাহের গ্রেপ্তার হন। পরে জিয়াউর রহমান সামরিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে তাহেরকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই কর্নেল (অব.) আবু তাহেরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
কাজী সালমা সুলতানা