বাংলা সাংস্কৃতিক অঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের আজ প্রথম প্রয়াণবার্ষিকী। গত বছর ১৫ নভেম্বর করোনা-পরবর্তী জটিলতায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
অভিনেতা, আবৃত্তিকার, চিত্রশিল্পী, নাট্যকার ও নাট্যনির্দেশক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি কলকাতার নদীয়ার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন। তাদের আদি বাড়ি ছিল কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কাছে কয়া গ্রামে। সৌমিত্র কলকাতার সিটি কলেজ থেকে আইএসসি ও পরে বিএ অনার্স (বাংলা) পাস করে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ অব আর্টসে দুবছর পড়াশোনা করেন। কলেজজীবনেই তার মঞ্চাভিনয়ে হাতেখড়ি। কিছুদিন তিনি রেডিওর ঘোষক এবং এক্ষণ নামে সাহিত্য ও সংস্কৃতি পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন।
১৯৫৮ সালে উপমহাদেশের কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ চলচ্চিত্রে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিষেক ঘটে। তিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় সোনার কেল্লা ও জয় বাবা ফেলুনাথ ছবিতে ‘ফেলুদার’ ভূমিকায় অভিনয় করেন। তার অভিনীত চরিত্রগুলোর ভেতরে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ফেলুদা। সত্যজিৎ রায়ের ৩৪টি সিনেমার ভেতর ১৪টিতে তিনি অভিনয় করেছেন। পরবর্তীকালে মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মতো পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করেছেন। ৬০ বছরের অভিনয় জীবনে তিনি প্রায় তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
সিনেমা ছাড়াও তিনি বহু নাটক, যাত্রা ও টিভি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। অভিনয় ছাড়া তিনি অনুবাদ, আবৃত্তি, নাটক ও কবিতা লিখেছেন এবং নাটক পরিচালনা করেছেন। কবিতার বই লিখেছেন ১৪টি। তার লেখা গ্রন্থÑশ্রেষ্ঠ কবিতা, মানিকদার সঙ্গে, চরিত্রের সন্ধানে, প্রতিদিন তব গাঁথা, শব্দরা আমার বাগানে, মধ্যরাতের সংকেত, পরিচয়, নাটক সমগ্র-১, নাটক সমগ্র-২ প্রভৃতি। অভিনয়ের জন্য দেশি-বিদেশি অজস্র পুরস্কার পেয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ভারত সরকারের পদ্মভূষণ সম্মান, সংগীত-নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার (২০১২) এবং সিনেমায় তার অবদানের জন্য ভারত সরকারের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র খেতাব ‘দাদাসাহেব ফালকে সম্মাননা’ অর্জন করেন। ২০১৭ সালে তিনি ফ্রান্স সরকারের দেয়া ‘লিজিওন অব অনার’-এ ভূষিত হন।
কাজী সালমা সুলতানা