স্মরণীয়-বরণীয়

বাঙালি নারী প্রগতি আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, কবি, সমাজনেত্রী, ‘জননী সাহসিকা’ বেগম সুফিয়া কামালের আজ ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। সেসময় বাঙালি মুসলিম নারীদের স্কুল-কলেজে পড়ার কোনো সুযোগ ছিল না। মায়ের উৎসাহে ও নিজ চেষ্টায় তিনি হয়ে ওঠেন স্বশিক্ষিত ও সুশিক্ষিত। বিয়ের পর স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেন তাকে সমাজসেবা ও সাহিত্যচর্চায় আগ্রহী করে তোলেন। ১৯২৬ সালে সওগাত পত্রিকায় সুফিয়া কামালের প্রথম কবিতা ‘বাসন্তী’ প্রকাশিত হয়। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সাঁঝের মায়া’র (১৯৩৮)  মুখবন্ধ লেখেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বইটির প্রশংসা করেন। ১৯৩২ সালে তার স্বামীর মৃত্যু তাকে আর্থিক সমস্যায় নিপতিত করে। তিনি কলকাতা করপোরেশন স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং ১৯৪২ সাল পর্যন্ত এ পেশায় নিয়োজিত থাকেন। ১৯৩৯ সালে কামালউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। সুফিয়া কামাল দেশ বিভাগের আগে কিছুদিন বেগম পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তিনি ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং অন্য নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি শিশুদের সংগঠন কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকার রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করলে তার প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলনে তিনি যুক্ত ছিলেন। এ বছরে তিনি ছায়ানটের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে তিনি গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেন এবং পাকিস্তান সরকারের দেয়া তমঘা-ই-ইমতিয়াজ পদক বর্জন করেন। ১৯৭০ সালে মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৭১ সালের মার্চের অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি ৯টি কাব্যগ্রন্থ, একটি গল্প, একটি ভ্রমণকাহিনি, একটি স্মৃতিকথা, একটি আত্মজীবনীমূলক রচনা, দুটি শিশুতোষ, একটি অনুবাদসহ ২০টিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেন। সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পদকসহ দেশি-বিদেশি ৫০টিরও বেশি পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০