Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 4:34 am

স্মরণীয়-বরণীয়

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্রসৈনিক, সংগীতশিল্পী এবং সুরকার বিপ্লবী হেমাঙ্গ বিশ্বাস। লোকসংগীতকে কেন্দ্র করে গণসংগীত সৃষ্টির ক্ষেত্রে তার অবদান উল্লেখযোগ্য। ১৯১২ সালের ১৪ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশী ইউনিয়নের পশ্চিম মিরাশী গ্রামে জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি ১৯৩০ সালে সিলেটের মুরারিচাঁদ কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। এ কারণে তিনি কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হন ও কারাভোগ করেন। ১৯৩২ সালে আবার তিনি গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় তিন বছর কারাভোগ করেন। তখন তিনি মারাত্মক যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হন। সে সময় বন্ড দিয়ে জেলমুক্তির রাষ্ট্রীয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে ব্রিটিশ সরকার তাকে মুক্তি দেয়।

হেমাঙ্গ বিশ্বাস চা বাগানের শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলন এবং ডিকবয় তেল কোম্পানির শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদে সংঘটিত আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। তিনি জমিদার পরিবারের সন্তান হয়েও ছিলেন নিপীড়িত, নির্যাতিত, বঞ্চিত মানুষের আপনজন। মানুষকে ভালোবেসে জমিদার বাবার অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তিনি পিতৃগৃহ ত্যাগ করেন। ১৯৪৩ সালে তার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সিলেট গণনাট্য সংঘ’। ১৯৪৮ সালে তেলেঙ্গানা আন্দোলনের সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিন বছর কারাবন্দি থাকার পর ১৯৫১ সালে মুক্তি পান। হেমাঙ্গ বিশ্বাস ১৯৬৯ সালে নকশাল বাড়ি আন্দোলনের প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন দেন। ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষা-আন্দোলনের সময় তিনি রচনা করেন ‘শোন এক আচানক কাহিনি।

১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাক-হানাদার বাহিনী গণসংগীতশিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গ্রামের বাড়িতে বোমাবর্ষণ করে। জীবনের শেষ দিকে হেমাঙ্গ বিশ্বাস ‘সিঙ্গার্স’ নামে একটি গানের দল করে গ্রামে গ্রামে গান গেয়ে বেড়াতেন। তিনি অর্ধশতাধিক নাটকে সংগীত পরিচালক ছিলেন। বাংলা ও আসাম ভাষায় তিনি অনেক গ্রন্থ রচনা করেন। তার রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ শঙ্খচিলের গান, জন হেনরীর গান, সেলাম চাচা, মশাল জ্বালো, মাউন্টব্যাটেন মঙ্গলকাব্য ইত্যাদি। ১৯৮৭ সালের ২২ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা