ধ্বনিবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও ভাষাবিজ্ঞানী মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের ১০২তম জন্মবার্ষিকী আজ। তিনি বাংলা ভাষার ব্যাকরণকে সর্বোচ্চ সহজ-সরলভাবে উদ্ভাসিত করেন। শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৬ সালে একুশে পদক লাভ করেন। মুহম্মদ আবদুল হাই ১৯১৯ সালের ২৬ নভেম্বর মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪১ সালে বিএ অনার্স এবং ১৯৪২ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর তিনিই ছিলেন বাংলা বিভাগের প্রথম মুসলমান ছাত্র। ঢাকা ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে আবদুল হাই তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৪৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি A Phonetic and Phonological Studz of Nasal and Nasalization in Bengali শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করে ডিস্টিংশনসহ এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তার এ অভিসন্দর্ভটি ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের পর বাংলাভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংকটের মধ্যে পড়ে। সে সময় আবদুল হাই দৃঢ়চিত্তে পেশাগত দায়িত্ব ও নৈতিক অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে আসেন। ১৯৫২ সালে তারই আগ্রহে সৈয়দ আলী আহসান, মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আহমদ শরীফ, আনিসুজ্জামান, আবু হেনা মোস্তফা কামাল প্রমুখ শিক্ষক বাংলা বিভাগে যোগদান করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি বাংলা বিভাগের রিডার ও অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৯৬২ সালে তিনি অধ্যাপক পদে নিয়োগ লাভ করেন। বাংলাভাষা গবেষণার ক্ষেত্র প্রস্তুত ও প্রসারের লক্ষ্যে তিনি সাহিত্য পত্রিকা (১৯৫৭) প্রকাশ করেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থ-সাহিত্য ও সংস্কৃতি, বিলেতে সাড়ে সাত শ’দিন, তোষামোদ ও রাজনীতির ভাষা, ভাষা ও সাহিত্য, ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব প্রভৃতি। ১৯৬৮ সালে আমেরিকার মিজোরি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দশ মাস অবস্থান করেন। ১৯৬৯ সালের ৩ জুন তিনি ঢাকায় চলন্ত ট্রেনের ধাক্কায় আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা