ক্ষুদিরাম বসু। প্রায় ২০০ বছর শাসন করা ব্রিটিশদের হাত থেকে মুক্তি পেতে আন্দোলন-সংগ্রামে যারা অগ্রগামী ভূমিকা রেখেছেন, যারা অস্ত্রহাতে অত্যাচারী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন, সেই তালিকার সর্বকনিষ্ঠ বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু। ক্ষুদিরাম বসু ১৮৮৯ সালের ৩ ডিসেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর থানার মৌবনী (হাবিবপুর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কিশোর বয়সে পড়াশোনায় মেধাবী হলেও দুরন্তপনা ও দুঃসাহসিক কার্যকলাপের প্রতি তার ঝোঁক ছিল। ১৯০৫ সালে তিনি সত্যেন বসুর নেতৃত্বে একটি গুপ্ত সংগঠনে যোগ দেন। সেখানে তিনি শরীরচর্চার সঙ্গে সঙ্গে নৈতিক ও রাজনৈতিক শিক্ষা এবং অস্ত্র চালনা শেখেন। বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ইংল্যান্ডে উৎপাদিত কাপড় পোড়ানো ও ইংল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত লবণবোঝাই নৌকা ডোবানোর কাজে তিনি অংশ নেন। ১৯০৬ সালে ব্রিটিশবিরোধী ইশতেহার বিলিকালে ক্ষুদিরাম প্রথম পুলিশের হাতে ধরা পড়েও পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। ক্ষুদিরাম বঙ্গভঙ্গবিরোধী ও ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী আন্দোলনে ক্রমাগত একাধিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেন। সে সময় ইংরেজ শাসক বঙ্গভঙ্গবিরোধী ও স্বদেশি আন্দোলনের কর্মীদের ওপর কঠোর সাজা ও দমননীতি প্রয়োগ করে আসছিল। সে কারণে যুগান্তর বিপ্লবী দল কলকাতার প্রধান প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই হত্যা কার্যকর করার দায়িত্ব পড়ে বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম বসুর ওপর। ১৯১৮ সালের ৩০ এপ্রিল এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তারা ভুল করে কিংসফোর্ডের গাড়ির মতো অন্য গাড়িতে বোমা মারলে গাড়ির ভেতরে একজন ইংরেজ মহিলা ও তার মেয়ে মারা যান। এ ঘটনার পর ক্ষুদিরাম ওয়ানি রেলস্টেশনে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। তিনি বোমা নিক্ষেপের দায় নিজের ওপর নিয়ে নেন। কিন্তু অপর কোনো সহযোগীর পরিচয় দিতে বা কোনো গোপন তথ্য প্রকাশ করতে রাজি হননি। বিচারে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট মুজফ্ফরপুর কারাগারে ফাঁসিতে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
কাজী সালমা সুলতানা