অদম্য এক সাহসী যোদ্ধা বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিনের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত হন। মোহাম্মদ রুহুল আমিন ১৯৩৫ সালের জুনে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার বাগআচড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৩ সালে জুনিয়র মেকানিক্যাল হিসেবে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগ দেন। প্রাথমিক প্রশিক্ষণের জন্য করাচির অদূরে মানোরা দ্বীপে পিএনএস কারসাজে (নৌবাহিনীর কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) যোগ দেন। ১৯৫৮ সালে তিনি পেশাগত প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন এবং ১৯৬৫ সালে মেকানিক্যাল কোর্সের জন্য নির্বাচিত হন। সফলভাবে কোর্স সমাপ্তির পর তিনি ইঞ্জিন রুম আর্টিফিশার নিযুক্ত হন। ১৯৬৮ সালে তিনি চট্টগ্রামে পিএনএস বখতিয়ার নৌঘাঁটিতে বদলি হন। একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি নৌঘাঁটি থেকে পালিয়ে এপ্রিল মাসে ত্রিপুরা যান এবং দুই নম্বর সেক্টরে যোগদান করেন। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বেশ কয়েকটি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। ভারত সরকার বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দুটি টাগবোট উপহার দেয়। এগুলোকে বাফার গান ও মাইন-পড জুড়ে গানবোটে রূপান্তর করে নামকরণ হয় ‘পদ্মা’ ও ‘পলাশ’। রুহুল আমিন নিয়োগ পান পলাশের ইঞ্জিন রুম আর্টিফিশার হিসেবে। একাত্তরের ৬ ডিসেম্বর মোংলা বন্দরে পাকিস্তানি নৌঘাঁটি পিএনএস তিতুমীর দখলের উদ্দেশ্যে পদ্মা, পলাশ, মিত্রবাহিনীর গানবোট পানভেল ও ভারতের বিএসএফের পেট্রোল ক্রাফট চিত্রাঙ্গদা একযোগে রওনা হয়। ১০ ডিসেম্বর মোংলা অতিক্রম করে পদ্মা ও পলাশ সামনে অগ্রসর হতে থাকে। দুপুরে আকাশে তিনটি জঙ্গি বিমান দেখা যায়। পদ্মা ও পলাশ থেকে বিমানের ওপর গুলিবর্ষণ করার অনুমতি চাইলে বহরের কমান্ডার বিমানগুলো ভারতীয় বলে ভুল করে। কিন্তু আকশ্যিকভাবে বিমানগুলো পদ্মা ও পলাশের ওপর গুলি ও বোমা বর্ষণ করে। শত্রুর একটি গোলায় পলাশ ধ্বংস হয় ও রুহুল আমিন আহত হন। আহতবস্থায় রাজাকারের হাতে তিনি ধরা পড়েন। রাজাকাররা আহত এই বীর সৈনিককে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে।
কাজী সালমা সুলতানা