শহীদ বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক নিজামুদ্দীন আহমদ ১৯২৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মুন্সীগঞ্জ জেলার মাওয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫১ সালে স্নাতক সম্মান এবং ১৯৫২ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে নিজামুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকতা শুরু করেন। ১৯৫০ সালে করাচির ‘সিভিল অ্যান্ড মিলিটারি গেজেট’ পত্রিকায় কাজ করেন। এরপর তিনি ‘দৈনিক মিল্লাত’, ‘দৈনিক আজাদ’, ‘ঢাকা টাইমস’, ‘পাকিস্তান অবজারভার’, ‘এপিপি’, ‘এএফপি’, ‘রয়টার’, ‘ইউপিআই’সহ বিভিন্ন পত্রিকা ও সংবাদ সংস্থায় কাজ করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ‘এপিপি’র পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম প্রতিনিধি নিযুক্ত হন এবং ১৯৬৪ সালে ‘পিপিআই’র সম্পাদক হন। তিনি কেন্দ্রীয় পাট বোর্ড, যক্ষ্মা সমিতি এবং চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য ছিলেন। নিজামুদ্দীন আহমদ ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ৫৮’র রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধবিরোধী আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকায় গণহত্যা শুরু করলে নিজামুদ্দীন সেই বিভীষিকাময় রাতে সংবাদ সংগ্রহের জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন। যুদ্ধের ভয়াবহতা বাড়তে থাকলে একাত্তরের এপ্রিলের দিকে পরিবারকে গ্রামের বাড়ি মাওয়ায় পাঠিয়ে দিয়ে তিনি ঢাকায় থেকে যান। এ সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন। পরে পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। মুক্তিযুদ্ধকালে নিজামুদ্দীন বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানিদের বর্বরোচিত আক্রমণের সংবাদ নিয়মিতভাবে নিউইয়র্ক টাইমস ও বিবিসিতে পাঠাতেন। তিনি যুদ্ধ পরিস্থিতি, গণহত্যা, পাকিস্তান বাহিনীর বর্বরতার সংবাদ তুলে ধরতেন ওই সংবাদমাধ্যমে। ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর নিজামুদ্দীন বাসায় বসে সকাল থেকে টানা একটা পর্যন্ত নিজেই সংবাদ টাইপ করেন। লেখা শেষ করে স্ত্রীকে দুপুরের খাবার দিতে বলেন। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে যখন খেতে বসেছেন, তখন ঘাতকরা হানা দেয় নিজামুদ্দীনের বাড়িতে। জমের মতো পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢুকে পড়ে খাবার ঘরে। খাবার শেষ হওয়ার আগেই টেবিল থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় এবং খাবারের এঁটো হাতও ধুতে দেয়নি ঘাতকরা। এরপর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি তার।
কাজী সালমা সুলতানা