Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 7:44 pm

স্মরণীয়-বরণীয়

বাঙালি জাতির সূর্যসন্তান শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে তিনি তার দলের সহযোদ্ধাদের নিয়ে রাতেই মহানন্দা অতিক্রম করে অবস্থান নেন রেহাইচরে। মুক্তিযোদ্ধাদের বাকি দুই দলের একটি দল বালিয়াডাঙ্গায় নদী অতিক্রম করে অবস্থান নেয়। অপর দল কালীনগর ঘাট দিয়ে নদী অতিক্রম করে আক্রমণ চালায়। মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সহযোদ্ধাদের নিয়ে যেখানে অবস্থান নিয়েছিলেন, তার অদূরেই ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্ত প্রতিরক্ষা। তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে সেখানে আক্রমণ চালান। মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর নিজেই ক্রল করে একটি বাংকারের দিকে এগিয়ে যান। তার লক্ষ্য ছিল গ্রেনেড ছুড়ে ওই বাংকার ধ্বংস করা। মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ওই বাংকারে গ্রেনেড ছোড়ার মুহূর্তে কাছাকাছি আরেক বাংকারের পাকিস্তানি সেনারা তাকে দেখে ফেলে। তারা তাকে লক্ষ করে গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন তিনি। এ ঘটনার পর তুমুল যুদ্ধের পর সেদিনই চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্ত হয়। তার সম্মানে ঢাকা সেনানিবাসের প্রধান ফটকের নামকরণ ‘শহীদ জাহাঙ্গীর গেট’ করা হয়েছে। ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ১৯৪৯ সালের ৭ মার্চ বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রহিমগঞ্জ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ১৯৬৭ সালে ১৫তম শর্ট সার্ভিস কোর্সে প্রশিক্ষণার্থী অফিসার ক্যাডেট নির্বাচিত হন এবং কাবুলে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি সোয়াতের সাইদুর শরিফে ১৭৩ নম্বর ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে তিনি তার তিন সহকর্মীকে নিয়ে গোপনে কর্মস্থল ত্যাগ করে শিয়ালকোটের কাছে সীমান্ত পার হন এবং মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। সামরিক বাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরের অফিসার মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ৭নং সেক্টরের মেহেদীপুর (মালদহ জেলায়) সাব-সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি  কানসাট, আরগরার হাট ও শাহপুরসহ কয়েকটি স্থানে সফল অভিযান চালান এবং অসাধারণ নৈপুণ্য ও সাহসিকতার পরিচয় দেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা ও আত্মদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মানসূচক ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। কাজী সালমা সুলতানা