কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক শওকত ওসমান ১৯১৭ সালের ২ জানুয়াারি পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার সবলসিংহপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম শেখ আজিজুর রহমান। ‘শওকত ওসমান’ তার সাহিত্যিক নাম। শওকত ওসমান ১৯৩৩ সালে কলকাতার আলীয়া মাদরাসা থেকে প্রবেশিকা, ১৯৩৬ সালে সেন্টজেভিয়ার্স কলেজ থেকে আইএ ও ১৯৩৯ সালে বিএ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪১ সালে বাংলায় এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি গভর্নমেন্ট কমার্শিয়াল কলেজে প্রভাষক পদে নিযুক্ত হন। ১৯৪৭ সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজ অব কমার্সে যোগ দেন এবং ১৯৫৯ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ঢাকা কলেজে অধ্যাপনা করে স্বেচ্ছায় অবসরে যান। শওকত ওসমান প্রবন্ধ, নাটক, রম্যরচনা, স্মৃতিকথা ও শিশুতোষ গ্রন্থও রচনা করেছেন। তার রচনার মধ্যে জননী, ক্রীতদাসের হাসি, সমাগম, চৌরসন্ধি, রাজা উপাখ্যান, জাহান্নাম হইতে বিদায়, দুই সৈনিক, নেকড়ে অরণ্য, পতঙ্গ পিঞ্জর; গল্পগ্রন্থ: মনিব ও তাহার কুকুর, ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দ্বী; প্রবন্ধ: সংস্কৃতির চড়াই-উতরাই, মুসলিম মানসের রূপান্তর; নাট্যগ্রন্থ: আমলার মামলা, পূর্ণ স্বাধীনতা চূর্ণ স্বাধীনতা; শিশুতোষ: ওটেন সাহেবের বাংলো, মস্কুইটোফোন, ক্ষুদে সোশালিস্ট, পঞ্চসঙ্গী; স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ: স্বজন সংগ্রাম, কালরাত্রি খণ্ডচিত্র, অনেক কথন, মুজিবনগর, অস্তিত্বের সঙ্গে সংলাপ, মৌলবাদের আগুন নিয়ে খেলা, আর এক ধারাভাষ্য; অনূদিত গ্রন্থ: নিশো, টাইম মেশিন, পাঁচটি কাহিনী, স্পেনের ছোটগল্প, ডাক্তার আব্দুল্লাহর কারখানা, পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে মানুষ, সন্তানের স্বীকারোক্তি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। শওকত ওসমানের জননী ও ক্রীতদাসের হাসি উপন্যাস দুটি প্রশংসিত হয়েছে। জননীতে সামাজিক জীবন ও ক্রীতদাসের হাসিতে রাজনৈতিক জীবনের কিছু অন্ধকারাচ্ছন্ন দিক উম্মোচিত হয়েছে। প্রাচীন কাহিনি, ঘটনা ও চরিত্রের রূপকে লেখক সমকালীন রাজনীতিতে স্বৈরাচারী চরিত্র ও নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত ‘নেকড়ে অরণ্য’ গ্রন্থে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলার নরনারীর ওপর নির্যাতনের করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে। শওকত ওসমান সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি, আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, পাকিস্তান সরকারের প্রেসিডেন্ট পুরস্কার, মাহবুবউল্লাহ ফাউন্ডেশন পুরস্কার, মুক্তধারা সাহিত্য পুরস্কার এবং স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি ১৯৯৮ সালের ১৪ মে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা