উদীচী সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা, প্রগতিশীল লেখক, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী সাহিত্যিক ও শ্রমিক-সংগঠক সত্যেন সেন। এ দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। এছাড়া তিনি রবীন্দ্রসংগীত ও গণসংগীতের সুকণ্ঠ গায়ক এবং গণসংগীত রচয়িতা। সত্যেন সেন ১৯০৭ সালের ২৮ মার্চ মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামে জš§গ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তার ডাকনাম ছিল লস্কর। কলেজে পড়াকালে বিপ্লবী দল যুগান্তর সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। সেসময় তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ শ্রেণিতে ভর্তি হন। কিন্তু যুগান্তর দলের সদস্য থাকায় তিনি ১৯৩১ সালে গ্রেপ্তার হন এবং কারাবরণ করেন। জেলে থেকেই তিনি বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করেন। ব্রিটিশ শাসনামলে ও পরবর্তীকালে পাকিস্তান আমলেও তিনি ১৯৪৯, ১৯৫৪, ১৯৫৮ ও ১৯৬৫ সালে রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার হন এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেন। ১৯৪৮ সালে কারা প্রশাসনের অত্যাচার ও নির্যাতনে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কারাবাসে অবস্থানকালে তিনি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হন। এ মতাদর্শ ও দর্শনকে তিনি জীবনাদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে সমাজ গড়ার সংগ্রাম পরিচালনা করেন। ১৯৫৩ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে নিজ গ্রাম সোনারাংয়ে ফিরে এসে যুক্ত হন কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে। তিনি প্রগতি লেখক ও শিল্পী সংঘের সংগঠক এবং ১৯৬৯ সালে উদীচী সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি চোখের অসুস্থতার কারণে প্রত্যক্ষভাবে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতার পর তিনি উদীচী পুনর্গঠনের কাজ করেন। উদীচী বাঙালির মুক্তির চেতনাকে ধারণ করে সাংস্কৃতিক সংগ্রাম গড়ে তোলে। সত্যেন সেন দৈনিক ‘মিল্লাত’ ও দৈনিক ‘সংবাদ’-এ সাংবাদিকতা করেন। তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ৪০। এর মধ্যে বাংলাদেশের কৃষকের সংগ্রাম, মানবসভ্যতার ঊষালগ্নে, ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলমানদের ভূমিকা; শিশুসাহিত্য: পাতাবাহার; জীবনী: মনোরমা মাসীমা, সীমান্তসূর্য আবদুল গাফফার খান প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তিনি আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদক লাভ করেন। ১৯৮১ সালের ৫ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা
