বাংলাদেশের সাংবাদিকতার পথিকৃৎ চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন। সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৭ সালে মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন। মোনাজাত উদ্দিন ১৯৪৫ সালের ১৮ জানুয়ারি রংপুরের কেরানীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রংপুর কৈলাশরন স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। কলেজে পড়ার সময়ই তিনি শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় মনোযোগী হন। ছড়া-কবিতা-গল্প রচনা এবং সাময়িক পত্রিকার প্রচ্ছদ অঙ্কনে সুনাম অর্জন করেন। ষাটের দশকে বগুড়া থেকে প্রকাশিত বুলেটিনের মাধ্যমে সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি তার। কর্মজীবনে তিনি ঢাকার দৈনিক আওয়াজ, দৈনিক আজাদ, দৈনিক সংবাদ ও সর্বশেষে দৈনিক জনকণ্ঠে কাজ করেছেন। দৈনিক সংবাদে ‘পথ থেকে পথে’ ধারাবাহিক প্রতিবেদনের জন্য তিনি সুখ্যাতি লাভ করেন। ২০ বছর একটানা ‘সংবাদ’-এ কাজ করার পর তিনি দৈনিক জনকণ্ঠে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে যোগদান করেন ১৯৯৫ সালের ২৪ এপ্রিল। দৈনিক রংপুর নামে নিজে একটি পত্রিকাও প্রকাশ করতেন। সংবাদ সংগ্রহের পাশাপাশি মোনাজাত উদ্দিন আলোকচিত্রও ধারণ করেন। তার কাজের ক্ষেত্র ছিল বাংলার মেঠোপথ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। তিনি নিজেকে তিনি দাবি করতেন ‘তৃণমূল মানুষের সংবাদকর্মী’ হিসেবে। সাংবাদিকতার জীবনে তিনি গ্রাম থেকে গ্রামে ছুটে চলেছেন সংবাদ সংগ্রহে, আর তা নিষ্ঠার সঙ্গে ছেপেছেন সংবাদপত্রে। এসব অভিজ্ঞতার আলোকেই তিনি লিখেছেন ১১টি গ্রন্থ। তার রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থÑপথ থেকে পথে, সংবাদ নেপথ্য, কানসোনার মুখ, পায়রাবন্দের শেকড় সংবাদ, নিজস্ব রিপোর্ট, ছোট ছোট গল্প, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন: গ্রামীণ পর্যায় থেকে, চিলমারীর এক যুগ, শাহা আলম ও মজিবরের কাহিনী, লক্ষ্মীটারী, কাগজের মানুষেরা, মোনাজাত উদ্দিন রচনাসমগ্র প্রভৃতি। মোনাজাত উদ্দিন গ্রামীণ এলাকায় তরুণদের নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন করেন। কখনও তাদের নিয়ে নাটক করিয়েছেন এবং উৎসাহ দিয়েছেন সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে। তিনি নিজেও ছিলেন একজন গীতিকার ও নাট্যকার। রংপুর বেতারে নিয়মিত কাজ করতেন। তার একাধিক নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। মোনাজাত উদ্দিন ‘চারণ সাংবাদিক’ হিসেবে কয়েকটি পুরস্কার লাভ করেন। তার মধ্যে ‘জহুর হোসেন স্বর্ণপদক’, ‘ফিলিপস পুরস্কার’ ও ‘একুশে পদক’ উল্লেখযোগ্য। ১৯৯৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর গাইবান্ধার সংবাদ সংগ্রহের সময় ফেরি থেকে পড়ে গিয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা