ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের শহিদ ছাত্রনেতা আসাদ। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি ছাত্রসংগ্রাম কমিটির ১১ দফা আদায়ের মিছিলে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। সে সময় আসাদ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন গ্রুপ) ঢাকা হল শাখার সভাপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান সংগঠক এবং একই সঙ্গে কৃষক সংগঠক ছিলেন। ১৯৬৯ সালেন ৪ জানুয়ারি ছাত্রদের ১১ দফা এবং বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন ছাত্র সংগঠনের নেতারা, যেক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখেন আসাদ। ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ছাত্ররা দেশব্যাপী সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ডাক দেন। ২০ জানুয়ারি ছাত্রসমাজের ১১ দফা কর্মসূচির মিছিলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আসাদ শহিদ হন। এর পর থেকে প্রতিবছর দিনটি ‘শহিদ আসাদ দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে তিনি স্বাধীনতা পদক পান। আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ১৯৪২ সালের ১০ জুন নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার ধানুয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পুরো নাম আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। ১৯৬৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে এমএ শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। আসাদ শহিদ হওয়ার পর তিন দিনের শোক পালন শেষে ২৪ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের ছয় দফা ও ছাত্রদের ১১ দফার ভিত্তিতে সর্বস্তরের মানুষের বাঁধভাঙা জোয়ার নামে ঢাকাসহ সারা বাংলার রাজপথে। অগণিত ছাত্র-জনতার মিছিলে শহিদ আসাদের রক্তমাখা শার্ট দেখে কবি শামসুর রাহমান রচনা করেন তার অমর কবিতা ‘আসাদের শার্ট’। কবি হেলাল হাফিজ ক্ষোভে ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি লেখেন। আসাদের মৃত্যুতে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আলোকচিত্র শিল্পী রশীদ তালুকদার তার ক্যামেরায় ছাত্র-জনতার দীর্ঘ মিছিলসহ আসাদের শার্টের ছবি তোলেন। আসাদের নাম হয়ে ওঠে নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মূর্ত প্রতীক। আসাদের মৃত্যুতে ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আইয়ুবের নামফলক নামিয়ে ফেলে। ‘আইয়ুব গেট’ হয়ে যায় ‘আসাদ গেট’ এবং ‘আইয়ুব এভিনিউ’ হয়ে যায় ‘আসাদ এভিনিউ’। পতন ঘটে আইয়ুব খান সরকারের। ক্ষমতায় আসেন আরেক স্বৈ^রশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান। তিনি ক্ষমতায় বসে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেন। গণ-অভ্যুত্থানের সিঁড়ি বেয়ে ১৯৭০ সালের অভূতপূর্ব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়; কিন্তু ইয়াহিয়া ক্ষমতা না ছেড়ে বাঙালির ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়। শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। এ যুদ্ধে বাঙালি বিজয়ী হয়ে প্রতিষ্ঠা করে স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।
কাজী সালমা সুলতানা