Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 4:34 am

স্মরণীয়-বরণীয়

সোভিয়েত বিপ্লবের মহান নেতা ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিন। তাকে বিংশ শতকের অন্যতম প্রধান ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার নেতা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের জনক হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। আন্তর্জাতিক সাম্যবাদের প্রধান ব্যক্তিত্ব হিসেবে ও মার্কসবাদ-লেনিনবাদ তত্ত্বের প্রবক্তা হিসেবেও তিনি বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রতিষ্ঠিত। ভ্লাদিমির লেনিন ১৮৭০ সালের ২২ এপ্রিল জার শাসিত তৎকালীন রাশিয়ার সিমবিরস্ক শহরে  জন্মগ্রহণ করেন। মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবী পরিবারের সন্তান লেনিন ছোটবেলা থেকে রাজনীতি সচেতন হয়ে ওঠেন। জার হত্যার অভিযোগে তার বড় ভাইকে ফাঁসি দেয়া হলে তা লেনিনকে গভীরভাবে আলোড়িত করে। তিনি রাজনৈতিকভাবে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৮৮৯ সালে লেনিন নিজেকে মার্কসবাদী হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৮৯০ সালে তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গে আইন ব্যবসা শুরু করেন। ১৮৯৩ সালে তিনি মার্কসবাদীদের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। এরপর থেকে শুরু হয় তার সংগ্রামী জীবন। ১৮৯৫ সালে লেনিন রাজনীতিক হিসেবে কারারুদ্ধ হন। পিটার্সবুর্গ জেলে বন্দি অবস্থায় তিনি লেখেন মার্কসবাদী পার্টির প্রথম খসড়া কর্মসূচি। বন্দি লেনিনকে ১৮৯৭ সালে পূর্ব সাইবেরিয়ার নির্জন স্থানে নির্বাসন দেয়া হয়। এই নির্বাসন তার জন্য এক অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করে। এ সময় তিনি ৩০টি বই রচনা করেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ‘রাশিয়ায় পুঁজিবাদের বিকাশ’। এ সময়ে তিনি রাশিয়ার শোষিত শ্রমিক এবং সর্বহারা গোষ্ঠীকে নিয়ে একটি দল গঠনে উদ্যোগী হন। ১৯০৫ সালে লেনিন রাশিয়ায় বিপ্লবের সূচনা করেন। সেই বিপ্লবকে রাজতন্ত্র থেকে রাশিয়ার পুঁজিবাদে উত্থান বলে সমাজ বিশ্লেষকরা মনে করেন। এটি ফেব্রুয়ারি বিপ্লব নামে খ্যাত। ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ায় সংসদ ‘দুমা’ গঠনসহ স্থানীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু শাসনব্যবস্থার তখনও জার পরিবারের নিয়ন্ত্রণ থেকে যায়। দ্বিতীয় জার এ সময় লেনিনকে রাশিয়া থেকে বহিষ্কার করে। ১৯১৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি বা বলশেভিক পার্টির নেতৃত্বে লেনিন অক্টোবর বিপ্লবের ডাক দেন। এই বিপ্লবের মাধ্যমে লেনিন বিশ্বে প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হন। তিনি ছিলেন বলশেভিক পার্টির প্রধান এবং এ বিপ্লবের নেতৃত্বদানকারী। ১৯২৪ সালের ২১ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন। লেনিনের মৃত্যুর পর ১৯২৭ সালে বিশেষ রাসায়নিকের মাধ্যমে তার মৃতদেহ লেনিন স্মৃতিসৌধে রাখা হয়।

কাজী সালমা সুলতানা