স্মরণীয়-বরণীয়

ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী নেতা তিতুমীর। প্রকৃত নাম সৈয়দ নিসার আলী। তিনি শুধু ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই করেননি, বাংলার অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে কৃষকদের সংগঠিত করে, প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। তিতুমীর ১৭৮২ সালের ২৭ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশপরগনা জেলার হায়দারপুর গ্রামে  জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে তিতুমীর স্থানীয় এক মাদরাসায় অধ্যয়ন করেন। তিনি  কোরআনে হাফেজ, বাংলা, আরবি ও ফার্সি ভাষায় দক্ষ এবং আরবি ও ফার্সি সাহিত্যের প্রতি গভীর অনুরাগী ছিলেন। ইসলামী ধর্মশাস্ত্র, আইনশাস্ত্র, দর্শন, তাসাওয়াফ ও মানতিক বিষয়েও তিনি সুপণ্ডিত ছিলেন। মাদরাসায় অধ্যয়নকালে তিনি দক্ষ কুস্তিগীর হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। ১৮২৭ সালে তিতুমীর জমিদার ও ব্রিটিশ নীলকরদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। কৃষকদের ওপর জমিদারদের অত্যাচারের প্রতিরোধ করতে গিয়ে অপরাপর জমিদারদের সঙ্গেও তিনি সংঘর্ষে লিপ্ত হন। এ সময়ে তিতুমীর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সরকারের কাছে জমিদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করেন। কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি। ১৮৩১ সালের ২৩ অক্টোবর তিনি বারাসতের নারিকেলবাড়িয়ায় বাঁশ এবং কাদা দিয়ে দ্বিস্তরবিশিষ্ট বাঁশের কেল্লা তৈরি করেন। এরপর তিনি চব্বিশপরগনা, নদীয়া ও ফরিদপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং ব্রিটিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। জমিদার ও ব্রিটিশ বাহিনী তিতুমীরের হাতে বেশ কয়েকবার পরাজিত হয়। বারাসতের বিদ্রোহে প্রায় ৮৩ হাজার কৃষকসেনা তিতুমীরের পক্ষে যুদ্ধ করেন। তিতুমীর চবিবশপরগনা, নদীয়া ও ফরিদপুর জেলায় স্বীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৩১ সালের ১৩ নভেম্বর ব্রিটিশ সৈন্যরা তাদের ঘিরে ফেললে তিতুমীর স্বাধীনতা ঘোষণায় বলেন, ‘একটু পরেই ইংরেজ বাহিনী আমাদের কেল্লা আক্রমণ করবে। লড়াইতে হারজিত আছেই, এতে আমাদের ভয় পেলে চলবে না। দেশের জন্য শহিদ হওয়ার মর্যাদা অনেক। এ লড়াই শেষ লড়াই নয়। আমাদের লড়াইয়ের প্রেরণায় এ দেশের মানুষ একদিন দেশ উদ্ধার করবে। আমরা যে লড়াই শুরু করলাম, এই পথ ধরেই একদিন দেশ স্বাধীন হবে।’ ১৮৩১ সালের ১৪ নভেম্বর ইংরেজ বাহিনী মুজাহিদদের ওপর আক্রমণ চালায়। তারা সাবেকি ধরনের স্থানীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত ইংরেজ বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়ে বাঁশের কেল্লায় আশ্রয় নেয়। ব্রিটিশ সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধরত অবস্থায় ১৯ নভেম্বর বহু অনুসারীসহ তিতুমীর শহিদ হন।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০