স্মরণীয়-বরণীয়

সাংবাদিক, পুঁথি সংগ্রাহক, লোকতত্ত্ববিদ মোহাম্মদ সাইদুর রহমান। তিনি মোহাম্মদ সাইদুর নামে সমধিক পরিচিত। দীর্ঘ ৫০ বছরের বেশি সময় তিনি এ দেশের লোকসাহিত্য ও লোকশিল্প নিদর্শন সংগ্রহের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। বাংলাদেশের লোকসাহিত্য-সংগ্রাহক হিসেবে তিনি অনন্য ভূমিকা রেখে গেছেন। মোহাম্মদ সাইদুর রহমান ১৯৪০ সালের ২৮ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ জেলার বিন্নগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা কুতুবদ্দিন আহমদ ছিলেন লোকগীতি গায়েন ও পুঁথি পাঠক। লোকসংস্কৃতির পারিবারিক আবহ মোহাম্মদ সাইদুরকে ছোটবেলা থেকেই বাংলার লোকসংস্কৃতি সম্পর্কে উৎসাহী করে তুলে। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি বামপন্থি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। সে সময় তিনি সাংবাদিকতাও শুরু করেন। তিনি ‘সাপ্তাহিক পূর্বদেশ’, ‘সাপ্তাহিক চিত্রালী’তে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি এবং ‘কিশোরগঞ্জ বার্তা’র সম্পাদনার কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে মওলানা ভাসানীর কাগমারী সম্মেলনে তিনি জারিগানের দল নিয়ে যোগদান করেন। মোহাম্মদ সাইদুর ১৯৬২ সালে তিনি বাংলা একাডেমিতে লোকসাহিত্য সংগ্রাহক পদে যোগ দেন। চন্দ্রাবতী সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে তার সংগ্রাহক-জীবনের সূত্রপাত। পরে তিনি তার বাড়িতেই পুঁথিপত্র থেকে মৈমনসিংহ গীতিকা পান। মৈমনসিংহ গীতিকা পড়তে গিয়ে তিনি চন্দ্রাবতীর সন্ধান পান। তিনি দশটি লোককাহিনি সংগ্রহ ও বাঁধাই করে বাংলা একাডেমিতে জমা দেন। বাংলা একাডেমি, সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে লোকশিল্প সংগ্রহে তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামে ঘুরে গীতি কবিতা, কাহিনি, পুঁথি ও কেচ্ছার কথক ও লেখন সংগ্রহ করে বেশ কয়েকটি মূল্যবান গ্রন্থ তিনি সংকলন করেন। এ ছাড়াও তিনি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সাহচর্যে থেকে নকশীকাঁথার একটি ভাণ্ডার গড়ে তোলেন। মোহাম্মদ সাইদুর রহমান তার নিজ গ্রামেও একটি লোকশিল্প জাদুঘর গড়ে তুলেন। ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমিতে তার একক লোকশিল্প সংগ্রহ প্রদর্শনী হয়। ১৯৮৮ সালে লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেল আর্ট গ্যালারিতে ওপেন এয়ার প্রদর্শনীতে তার লোকশিল্প সংগ্রহের প্রদর্শনী হয়। ১৯৮৯ সালে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সঙ্গে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি যৌথভাবে ‘নকশীকাঁথা প্রদর্শনী’ করেন। এ উপলক্ষে তার কয়েকটি লোকশিল্পের বিষয়ভিত্তিক সচিত্র ইংরেজি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। সাইদুর রহমান ২০০১ সালে বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ এবং ২০০২ সালে কারুশিল্পী পরিষদ থেকে সম্মাননা পান। ২০০৭ সালের ৩ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০