দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব। তিনি জিসি দেব নামেই সমধিক পরিচিত। দর্শনে অবদানের জন্য ১৯৬৭ সালে তিনি সম্মানসূচক ‘দর্শনসাগর’ উপাধিতে ভূষিত হন। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ১৯০৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বর্তমান সিলেটের বিয়ানীবাজারের লাউতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম গোবিন্দ চন্দ্র দেব পুরকায়স্থ। ১৯২৯ সালে তিনি কলকাতার সংস্কৃত কলেজ থেকে দর্শন বিষয়ে বিএ (সম্মান) এবং ১৯৩১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি লাভ করে অধ্যাপনায় যোগদান করেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি ‘রিজন, ইনটুইশন অ্যান্ড রিয়ালিটি’ নামক অভিসন্দর্ভ রচনা করেন। ১৯৪৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে কিছুকাল অধ্যাপনা করে ১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। গোবিন্দ চন্দ্র দেবের প্রকাশিত গ্রন্থ নয়টি। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: আইডিয়ালিজম অ্যান্ড প্রগ্রেস, আইডিয়ালিজম: এ নিউ ডিফেন্স অ্যান্ড এ নিউ অ্যাপলিকেশন, আমার জীবনদর্শন, অ্যাসপিরেশন অব দ্য কমন ম্যান, দি ফিলোসফি অব বিবেকানন্দ অ্যান্ড দি ফিউচার অব ম্যান, তত্ত্ববিদ্যাসার, বুদ্ধ: দি হিউম্যানিস্ট গ্রন্থগুলো তার জীবদ্দশায়ই প্রকাশিত হয়। দি প্যারাবুলস অব দি ইস্ট এবং মাই আমেরিকান এক্সপিরিয়েন্স নামক গ্রন্থ দুটি তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব চিন্তাচেতনায় ছিলেন সক্রেটিসের ভাবশিষ্য। অসাম্প্রদায়িক ও মানবতাবাদী দার্শনিক দেব সব ধর্মকে দেখেছেন উদার ও সর্বজনীন দৃষ্টিকোণ থেকে। তার চিন্তাধারার মূলে কাজ করেছে বিশ্বজনীন মানবপ্রেম, সাম্য ও মৈত্রী। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশি বুদ্ধিজীবী-সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার একটি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পাকিস্তানি সৈন্যরা তাকে হত্যা করে। ২৬ মার্চ বিকেলে জগন্নাথ হলের ভেতরে গর্ত খুঁড়ে মাটি চাপা দেয়া হয় হলের প্রভোস্ট দেবসহ অন্যদের মৃতদেহ। বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৫ সালে তাকে ‘একুশে পদক’ এবং ২০০৮ সালে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ দেয়। ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে তার স্মরণে গোবিন্দ দেব দর্শন গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। তিনি অসাম্প্রদায়িক ও মানবতাবাদী দর্শন প্রচারের জন্য তার সব সম্পত্তি ও অর্থ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করে গেছেন।
কাজী সালমা সুলতানা