ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সক্রিয় কর্মী আশালতা সেন। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, স্বদেশি আন্দোলন, লবণ আইন অমান্য আন্দোলন, ভারত ছাড় আন্দোলন এবং সর্বোপরি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে আছে। আশালতা সেন ১৮৯৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যের প্রতি তার অনুরোগ প্রকাশ পায়। তার অন্যান্য রচনাÑউচ্ছ্বাস, উৎস, বিদ–্যৎ ও ছোটদের ছড়া। তিনি একটি আত্মজীবনীও রচনা করেন। আশালতার মাতামহী নবশশী দেবী ছিলেন স্বদেশি আন্দোলনের কর্মী। তারই প্রেরণা ও তত্ত্বাবধানে আশালতা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে নিজেকে যুক্ত করেন। এ সময় নবশশী দেবী বিলাতি কাপড় বর্জনের সংকল্পপত্রে দৌহিত্রী আশালতাকে দিপড স্বাক্ষর করিয়ে স্বদেশিব্রতে দীক্ষিত করেন। ১১ বছর বয়সে আশালতা গ্রাম্য নারীদের স্বাক্ষর সংগ্রহকাজ অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন। এভাবেই শুরু হয় তার সংগ্রামী জীবন। ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনের সময় মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি ঢাকার গেন্ডারিয়ায় নিজ বাসভবনে মহিলাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। মহাত্মা গান্ধীর বিভিন্ন আন্দোলনের সঙ্গে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এসব আন্দোলন পরিচালনাকালে কয়েকবার কারাভোগও ভোগ করেন। ১৯৩৩ সালে আশালতা সেন ঢাকা জেলার কংগ্রেসের সহসভাপতি মনোনীত হন। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে তিনি ত্রাণ তৎপরতায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থা পরিষদ এবং ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানের আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। নারীদের শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি ‘জাগ্রত সেবিকাদল’, ‘রাষ্ট্রীয় মহিলা সঙ্ঘ’, ‘নারীকর্মী শিক্ষা কেন্দ্র’ এবং কংগ্রেস মহিলা সঙ্ঘ নামে সংগঠন তৈরি করেন। বক্তৃতার মাধ্যমে তারা এ অঞ্চলের অনুন্নত সম্প্রদায়ের লোকদের আত্মোন্নয়নের জন্য গণচেতনা জাগ্রত করার চেষ্টা করেন। গেন্ডারিয়ার জুরাইনে ১৯২৯ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘জুরাইন শিক্ষা মন্দির’। আশালতা সেনের বাড়িটি বর্তমানে গেন্ডারিয়া ‘মনিজা রহমান বালিকা বিদ্যালয়’ নামে পরিচিত। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে আশালতা সেন এ দেশের জনগণকে নানাভাবে সাহায্য করেন এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে গান রচনা করেন। স্বাধীনতার পর তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের আমন্ত্রণে তিনি সপরিবারে ঢাকা আসেন। ১৯৮৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা