স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগাম পরিষদের সদস্য, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য জাতীয় বীর আবদুল কুদ্দুস মাখন। সত্তরের দশকের শুরুতে যেসব ছাত্রনেতা পাকিস্তানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি তাদের অন্যতম। আবদুল কুদ্দুস মাখন ১৯৪৭ সালের ১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মৌড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুল জীবনেই তিনি ছাত্র রাজনীতিতে যোগদান করেন। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। আবদুল কুদ্দুস মাখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ১৯৬৯ সালে আইন বিভাগে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রনেতা হিসেবে ৬৯’র গণ-অভ্যুত্থানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের (ডাকসু) সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সত্তর দশকের শুরুতে দেশে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পূর্বাঞ্চলীয় সেক্টরের অধীনে তিনি মুজিব বাহিনীর অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পূর্বাঞ্চলীয় লিবারেশন কাউন্সিলের ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবেও তিনি বিশেষ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের রিক্রুটমেন্ট, ট্রেনিং ও অস্ত্র সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৩ সালে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে বার্লিনে আন্তর্জাতিক বিশ্ব যুব উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। দলটির জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করার পর ২৩ আগস্ট তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৯৭৮ সালের ১২ নভেম্বর জেল থেকে মুক্তি লাভ করেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন (১৯৯২-১৯৯৪)। ১৯৯৪ সালের ১০ জানুয়ারি মাত্র ৪৭ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা